বিপদে পড়লে ঐক্য, বিপদ কাটলে অনৈক্য-বিভেদ’ নীতি বাদ দিতে হবে

হটকারিতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবি পার্টি। দলটির নেতারা বলছেন, বিপদে পড়লে ঐক্য আর বিপদ কেটে গেলে অনৈক্য ও বিভেদ’ এই নীতি বাদ দিতে হবে। ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ যারা করছে তারা আধিপত্যবাদীদের উদ্দেশ্য সাধন করছে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফারইস্ট মিলনায়তনে আয়োজিত পূর্ব নির্ধারিত যৌথসভায় এ সব কথা বলেন নেতাকর্মীরা।
দলের মনোনীত প্রার্থী এবং কেন্দ্র ও তৃণমূল নেতাদের নিয়ে এবি পার্টির যৌথসভায় শহীদ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ সভায় এ সব বক্তব্য উঠে আসে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা হাদির খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তীব্র ভাষায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্কৃয়তার সমালোচনা এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী আচরণ বন্ধের দাবি জানান তারা।
একইসঙ্গে তারা বলেন, আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কিছু কুচক্রী ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত রয়েছে, যাদের তৎপরতায় হাসিনা এবং আধিপত্যবাদিরাই লাভবান হবে। তারা বলেন, বরেণ্য সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা এবং প্রথম আলো, ডেইলি স্টার অফিসে আক্রমণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সভায় বক্তারা বলেন, আমাদের চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধতার সময় মাথা গরম হটকারী বিচ্ছিন্ন কিছু গোষ্ঠী বার বার বিভেদ তৈরি করে। গতকাল রাত পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ মানুষ ওসমান হাদির নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, সোচ্চার ও এককণ্ঠ ছিলেন। প্রথমআলো-ডেইলিস্টারে অগ্নি সংযোগ ও হামলার কারণে আজ সেখানে কতবড় ক্ষত তৈরি হলো, তা বোঝার ক্ষমতা যাদের নাই তাদের ওসমান হাদির চিন্তা ও আদর্শের অনুসারী ভাবতে পারছি না।

এছাড়া জুমার নামাজের পর এবি পার্টির উদ্যোগে বিরাট একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন মোড় থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব-শাহবাগ-শহিদ মিনার ঘুরে আবার পল্টনে এসে শেষ হয়।
প্রতিবাদ সভায় মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু গ্রুপের বাড়াবাড়ির কারণে ওসমান হাদির শোকাহত অনুসারীরাও দুইভাগ হয়ে গেছে। শহিদ ওসমান হাদির রক্ত যদি কাউকে নাড়া দেয় তাহলে অন্তত আগামী এক বছর কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ রাখার আহ্বান জানান তিনি।
জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের কোনো ভুল কেউ বড় করে দেখেনি, এখন তারাই সবাই তাদের ভুল খোঁজায় এবং জুলাই গাদ্দার বলে আখ্যা দিতে ব্যস্ত। বিএনপি জামায়াত পরস্পরকে রাজাকার বা নতুন ফ্যাসিস্ট বলে দোষারোপ করলে হাসিনাই সবচেয়ে খুশি হন বলে উল্লেখ করেন মঞ্জু।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ যথেষ্ট নয় মন্তব্য করে মঞ্জু বলেন, উচিত ছিল জরুরি সতর্কতা জারি করা। সরকার বলেছিল তফসিল ঘোষণার পর তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিন্তু এখন তিন স্তরের গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। প্রশাসন কোনো গোয়েন্দা তথ্য দিতে পারে নাই, মিডিয়ায় খুনিদের ছবি পরিচয় প্রকাশ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয় নাই বরং খুনিকে নিরাপদে সীমান্ত পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে। ওসমান হাদির চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে পারে নাই সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী।
এই সরকার বা উপদেষ্টা পরিষদকে চরমভাবে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বাংলাদেশকে পরাজিত হতে দেব না, শত গুলি-ষড়যন্ত্র আমাদের থামাতে পারবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ক্ষমতা অনেক ভয়ংকর জিনিস দয়া করে সংযত হোন। ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড এবং প্রথম আলোতে হামলার কারণে হাসিনাই সবচেয়ে খুশি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ ও উপদেষ্টা পরিষদকে প্রশাসনের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া ওসমান হাদির জানাজায় শরিক হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান মুজিবুর রহমান মঞ্জু।
দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, স্মরণকালের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তরুণ ওসমান হাদির মৃত্যু আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে কিন্তু কোথাও হামলা করা বা আগুন দেওয়া আধিপত্যবাদীদের শক্তি জোগাবে। আগরতলায় আমাদের হাই কমিশনে হামলা যেমন নিন্দনীয় তেমনি এখানে ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার হুমকিও গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, মিডিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে গত ১৭ বছরে চরমভাবে ভূমিকা রেখেছে তাই বলে কোনো মিডিয়া হাউজে হামলা আমাদের অভ্যুত্থানকে কলঙ্কিত করবে। জাসদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তরুণদের অস্ত্র সরবরাহ বা নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে এই সময় গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এখন যে বা যারা হঠকারিতা করবে তারা ভিনদেশিদের পক্ষের লোক হিসেবে ধরে নেব।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে ফুয়াদ বলেন, তাদের নীরবতার কারণে নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর কারণে অভ্যুত্থানের পক্ষের তরুণদের হতাশ করে সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এস আলমের টাকা এবং পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করতে সচেষ্ট। যে বিচারক ওসমান হাদির খুনিকে জামিন দিয়েছেন এবং যেসব আইনজীবী খুনিদের পক্ষে মামলা লড়েছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় মানিক মিয়া এভিনিউতে শহিদ ওসমান হাদির জানাজা এবং গণভবনের ভেতরে দাফন করে তার সামনের সড়কের নাম শহিদ হাদি সড়ক নামকরণের দাবি জানান তিনি।
এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর মেজর (অব) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, সরকারের চেষ্টায় যেখানে নির্বাচন আসন্ন সেখানে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে একটি চক্র খুনখারাবিতে মেতেছে। মানুষ পুরোনো বস্তা পচা রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব) দিদারুল আলম এবং লে. কর্নেল হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার জোবায়ের আহমদ ভুঁইয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, আনোয়ার সাদাত টুটুল, আমিনুল ইসলাম এফসিএসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা প্রতিবাদ সভা এবং মিছিলে অংশ নেন।
জেইউ/এমএন