ইপিএস সিস্টেম সংস্কারের দাবি ২১ হাজার কোরিয়াগামী কর্মীদের

ইপিএস (এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম) সিস্টেম সংস্কারসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন ২১ হাজার কোরিয়াগামী পক্ষের ভুক্তভোগীরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানবনন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ইপিএস কর্মী এইচ এ আরিয়ান, সোহেল, খায়রুল কবির, সাদেকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম শান্ত প্রমুখ।
বক্তব্যে তারা বলেন, বাংলাদেশে ইপিএসের যাত্রা এক যুগেরও অধিক সময় ধরে চলমান রয়েছে। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইপিএস সিস্টেম বাংলাদেশে চালু হয়েছিল। তবে এক যুগ পরে এসেও সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ইপিএস কর্মীদের কোরিয়ায় যাওয়ার সব যায়-দায়িত্ব বোয়েসেলের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও, তাদের অপেশাদারিত্ব ও অনিয়মতান্ত্রিক রোস্টার ব্যবস্থা ও গবেষণাহীন কার্যক্রমের ফলে প্রায় ২১ হাজার ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
তারা আরও বলেন, হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা রোস্টার অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও বোয়েসেল সেই সব কর্মীদের বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না করে নতুন সার্কুলার দিয়ে কর্মীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে চলছে। এছাড়াও বোয়েসেলের মানসম্মত ও কর্মমুখী কোনো পরিকল্পনা নেই, যা দ্বারা তারা চলমান সমস্যা যথাযথভাবে মনিটরিং ও সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে।
কোরিয়ার নানা কোম্পানিতে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে বোয়েসেলের পক্ষ থেকে কোনো এজেন্ট কিংবা মাধ্যম নেই যা দ্বারা কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। ইপিএসের অন্যান্য দেশের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গড় ইস্যুর সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রমাগত ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে কমছে ইপিএসের মান, যা চলতে থাকলে ইপিএস অচিরেই বাংলাদেশ থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে।
তারা বলেন, ইপিএস সিস্টেম এভাবে চলতে থাকলে অনেক ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন ধ্বংস হবে এবং তারা আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নিতে পারে। একজন কর্মী তার মেধা, শ্রম, সময় ও অর্থ ব্যয় করে কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ধাপে-ধাপে উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকার ভিত্তিতে রোস্টারভুক্ত হতে হয়। সেক্ষেত্রে বোয়েসেলের কর্মকর্তারা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ব্যর্থতা, উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে ইপিএসের অধীনস্থ ছেলে-মেয়েরা সবচাইতে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে আশা ছেলে-মেয়েদের ভরসার জায়গা হিসেবে বোয়েসেল এবং বাংলাদেশ ইপিএস সিস্টেমকে দ্রুত সময়ে সংস্কার করে ২১ হাজার কর্মীদের ওপর হওয়া বৈষম্য দূর করার জন্য বিনীত নিবেদন রইল।
মানববন্ধনে যে সব দাবি উপস্থাপন করা হয়, সেগুলো হলো—
১. ২০২২ সাল থেকে শুরু করে যে সব কর্মী ডিলেট হয়েছে বা হবে সে সব কর্মীদের রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পূণঃরোস্টার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং ২০২৩ সাল সহ যে সব ইপিএস কর্মী রোস্টারে আছে তাদের ডিলিট না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
২. দুই বছরের ১০টি ইস্যুতে ৭-৮ বার কোম্পানির মালিকের কাছে আমাদের ফাইল বাধ্যতামূলক পৌঁছাতে হবে এবং সেটা সিরিয়াল/সাল/বছর অনুযায়ী হতে হবে।
৩. বর্তমান রোস্টারকৃত কর্মীদের মধ্যে ৭৫-৮৫ ভাগ কোরিয়াতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত সব প্রকার সার্কুলার বাণিজ্য বন্ধ রাখতে হবে।
৪. কোরিয়ার প্রত্যেক বাণিজ্যিক জোনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এজেন্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে, কমপক্ষে (৪-৫ জন)। যারা প্রত্যেক ইস্যূর পূর্বে তাদের নির্ধারিত জোনের আওতাভুক্ত কোম্পানিতে গিয়ে ইস্যুর জন্য কোম্পানির মালিকদের উৎসাহিত করবে।
৫. ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন মুক্ত বাংলাদেশ ইপিএস ঘোষণা করতে হবে। আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ পেলে বোয়েসেল/এইচ, আর.ডি সেই সব চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ থাকলে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৬. নতুন নতুন খাত/সেক্টর খুঁজে বের করে রোস্টার ভুক্তদের মধ্য হতে সরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে তাদের কোরিয়া যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ও কূটনৈতিক বিচক্ষন্তার মাধ্যমে সব রোস্টার ভুক্তদের কোরিয়ায় প্রবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যাতে কোনো কর্মী কোরিয়াতে প্রবেশ করতে না পারে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৭. মৎস্য, কনস্ট্রাকশন, শিপ বিল্ডিং খাতের ভিসা ইস্যু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। রোস্টারকৃত কর্মীদের ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো অঞ্চল থেকে রোস্টারবিহীন কাউকে ভিসা ইস্যু করা যাবেনা, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের অন্য খাত/সেক্টরে রোস্টার পরিবর্তন করে হলেও ভিসা ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে।
৮.কোরিয়া প্রবাসী কোনো কর্মী কোম্পানি পরিবর্তন বা রিলিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের এজেন্ট স্ব-শরীরে কোম্পানিতে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে।
ওএফএ/এমএন