পাঁচ সদস্যের দুদক কমিশন, মানিলন্ডারিং ক্ষমতা বেড়েছে

একজন নারী এবং একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কমিশনারসহ অনধিক পাঁচ জন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন গঠন, মানিলন্ডারিং ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এনফোর্সমেন্ট ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশকিছু পরিবর্তন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনক্রমে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশ সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যানসহ পাঁচ কমিশনার নিয়োগের বিষয়ে ২০০৪ সালের ৫ নং আইনের ৫ নং ধারা সংশোধন করা হয়েছে। নতুন বিধানে একজন নারী ও একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কমিশনারসহ অনধিক পাঁচ জন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।
ওই আইনের ৭ নং ধারা সংশোধন করে কমিশনার নিয়োগের বাছাই কমিটি গঠন ও কার্যাবলিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন গঠনে দুদক আইনে সার্চ কমিটি পরিবর্তন করে ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’ হবে।
দুদক কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বাদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক, যিনি কমিটির সভাপতিও হবেন। সদস্য হবেন–
প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক; বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক; বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান; সরকারি দল এবং প্রধান বিরোধী দলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত দুই জন সংসদ সদস্য, যাদের মধ্যে একজন সরকার দলীয় ও অন্যজন বিরোধী দলীয় হবেন; তবে শর্ত থাকে যে, জাতীয় সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় বাছাই কমিটি গঠনের প্রয়োজন হলে সংসদ ছাড়াই বাছাই কমিটি গঠন করা যাবে।
অধ্যাদেশে পরিবর্তন আনা হয়েছে দুদক কার্যাবলিতে। প্রথমবারের মতো এনফোর্সমেন্ট ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয় আইনের ৩ উপধারায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আগে বিধিতে সংযুক্ত করে ওই কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো।
অন্যদিকে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তে ক্ষমতা বেড়েছে। সংশোধিত ২০০৪ সনের ৫ নং আইনের তফসিল সংশোধন করে দুদকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আইনের তফসিলের দফা (ঘ) অনুসারে, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১২ সনের ৫ নং আইন) এর অধীন ঘুষ ও দুর্নীতি, দলিল দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ ও পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য-জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে তার কাজে লাগিয়ে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে বাজার সুবিধা গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা সংক্রান্ত অপরাধগুলো দুদকের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে দুদক শুধু ঘুষ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং অপরাধ তফসিলভুক্ত ছিল।
২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে আট সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। দীর্ঘ যাচাই-বাছাই শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার মধ্যে বিভিন্ন এজেন্সির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা এবং ‘স্বাধীন’ ও ‘সাংবিধানিক’ স্বীকৃতি দেওয়াসহ সংস্থাটির সংস্কারে ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছিল। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দুদককে একটি ‘কার্যকর’ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেব গড়ে তুলতে এবং প্রতিষ্ঠানটির আমূল সংস্কারে ৩৭ সুপারিশের পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন পরিবর্তনসহ ১০টি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছিল দুদক সংস্কার কমিশন। যদিও গত ২৮ নভেম্বর দুদক অধ্যাদেশ ২০২৫ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়ায় গভীর ক্ষোভ ও হতাশা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
আরএম/এসএসএইচ