দিয়াবাড়িতে তৃতীয় লিঙ্গের ৩০ জনকে দোকান স্থাপনের অনুমতি দিলো ডিএনসিসি

শহরের অর্থনীতি ও সমাজের মূলধারায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকায় ৩০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে অস্থায়ী দোকান স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) গুলশান ডিএনসিসি নগর ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বরাদ্দপত্র তুলে দেওয়া হয়।
বরাদ্দপত্র হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমান।
এই কর্মসূচির আওতায় দিয়াবাড়ি মেট্রো সেন্টার স্টেশনের উত্তর পাশে, মেট্রো লাইনের পূর্ব পাশের রাস্তা ও ফুটপাতের নির্দিষ্ট ফাঁকা স্থানে প্রত্যেককে ১৫ বর্গফুট করে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, একটি শহর তখনই ন্যায্য হয়ে ওঠে, যখন সেখানে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়। ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য। একটি ন্যায়ভিত্তিক শহর গড়তে আমাদের সব শ্রেণি-পেশা ও সব লিঙ্গের মানুষকে এই যাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সমাজ তখনই অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, যখন মানুষ সহ অবস্থানে থেকে পারস্পরিক লেনদেন, কাজ ও ব্যবসায় জড়িত হতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডই ভ্রাতৃত্ববোধ, সম্মান ও সমতার ভিত্তি তৈরি করে। আমরা কাউকেই বাদ দিয়ে এই শহরকে এগিয়ে নিতে চাই না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই আন্দোলনের চেতনার মূল লক্ষ্যও ছিল সবার অংশগ্রহণ ও সমান অধিকারের নিশ্চয়তা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রশাসক বলেন, বর্তমানে যারা অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করছেন, কীভাবে তাদের ধাপে ধাপে আনুষ্ঠানিক বা ফর্মাল ব্যবসায়িক কাঠামোর আওতায় আনা যায়– সে বিষয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। তবে একটি শর্ত– নিজেদের ব্যবসা নিজেরাই পরিচালনা করবেন। আমরা চাই আপনারাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠুন, যাতে অন্যদের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারেন।
মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, একটি শহর যত বেশি অতিরিক্ত ‘ফর্মাল’ হয়ে যায়, ততই অনেক মানুষ প্রান্তিক হয়ে পড়ে। আমরা এমন শহর বা দেশ চাই না, যেখানে সমতা ও অধিকারের কথা বলতে গেলে মানুষকে নানা জটিল উপমা ও ব্যাখ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি শোভা সরকার ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই স্বীকৃতি ও অনুমোদন আমাদের সামাজিক মর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেকেই রাস্তায় টাকা তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন কিন্তু রাস্তায় কেউ নিজের ইচ্ছায় আসে না। পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরাও কর্মমুখী হতে পারব।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, আমরা যেন অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেই দোয়া চাই। আজকের এই ৩০ জন যেন ভবিষ্যতে ৩০ হাজারে রূপ নেয়, এটাই আমাদের আশা। আমরা পিছিয়ে পড়া না, পিছিয়ে রাখা জনগোষ্ঠী। সুযোগ পেলে আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারব।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ