সড়কে গ্রেফতার-মামলার ভয়, নেই অকারণ ঘোরাঘুরি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে চলছে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধের প্রথম দিনে কড়াকড়ি থাকলেও রাজধানীর সড়কে ছিল জনসাধারণের অকারণ ঘোরাঘুরি।
অনেকে এসেছিলেন লকডাউনের (বিধিনিষেধ) চিত্র দেখতে। অনেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়েছিলেন। অকারণ-ঘোরাঘুরি আর অনুপযুক্ত অজুহাতে যারা বের হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে পাঁচ শতাধিক জনকে আটক-গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের অনেকের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়েছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনে সড়কে অযথা-অকারণ ঘোরাঘুরি কমেছে অনেকটাই। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। আর চিত্রের মিল পাওয়া গেছে বিভিন্ন সড়কে থাকা চেকপোস্টে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে।
শুক্রবার (২ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ও যানবাহনে উপস্থিত কিছুটা বাড়লেও তা চোখে পড়ার মতো নয়। তাছাড়া রাতের শেষভাগে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি সকাল পর্যন্ত গড়ানোয় মানুষের উপস্থিতি আরও কম ছিল। তবে দুপুরে জুমার নামাজ আদায় করতে অনেকেই বের হয়েছিলেন। কিন্তু তারা প্রধান প্রধান সড়কে না এসে অলিগলিতেই অবস্থান নিয়েছিলেন।
কুড়িল থেকে শুরু করে রামপুরা ব্রিজ, গুলশান, ধানমন্ডি, মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়কে থাকা চেকপোস্টগুলোতে খুব বেশি চাপ ছিল না। দুপুর ১২টায় মেরুল বাড্ডায় অবস্থিত বাড্ডা থানার চেকপোস্টে প্রায় আধঘণ্টা দাঁড়িয়েও কয়েকটি রিকশা, ট্রাক আর ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। ফুটপাতগুলোতেও পথচারীদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। নিতান্তই বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকলে কেউ বের হচ্ছেন না। চেকপোস্টগুলোতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলেই যেতে দেওয়া হচ্ছে।
এ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল থেকে সাধারণ মানুষ ও যানবাহনের চালকরা শতভাগ যৌক্তিক কারণ দেখিয়েছেন। তাই তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে যত মানুষ ও গাড়ির চালকরা এ চেকপোস্ট দিয়ে পার হয়েছেন, তারা সবাই যৌক্তিক কারণ দেখিয়েছেন। সকাল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িতে মানুষের উপস্থিতি কম। তাছাড়া ছুটির দিন ও সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি অনেকটা কমেছে।
বিধিনিষেধের প্রথম দিন অনেককে গ্রেফতার-আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন পরিস্থিতির এমন পরিবর্তন কেন- জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল আমাদের চেকপোস্টে অনেককে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু রাজধানীতে অনেকসংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার, আটক, মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে। এ ভয়েই আজ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
উত্তর বাড্ডা ফুটওভার ব্রিজের নিচে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিকশাচালক ইদ্রিস মিয়া মতে, এবারের লকডাউন খুব কড়াভাবে পালন হচ্ছে। গতকাল পুলিশ মানুষজনকে আটক করেছে, মামলা হয়েছে। এ ভয়ে আজ সড়কে মানুষ নেই। সকাল থেকে সড়কে মানুষ নেই।
এদিকে, সকাল থেকেই প্রগতি সরণিতে র্যাব-১ এর একাধিক টিমকে টহল দিতে দেখা গেছে। র্যাবের পাশাপাশি রাস্তায় বাড্ডা ও ভাটারা থানার পুলিশের টহল টিমকেও দেখা গেছে। প্রয়োজনে টিমের সদস্যরা গাড়ি থামিয়ে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
এমএসি/আরএইচ