গুদামের চালে নষ্ট দানার আধিক্য, সতর্ক করল অধিদফতর
চলতি বছর বোরো মৌসুমে এ পর্যন্ত ছয় লাখ টনেরও বেশি চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে গুদামে মজুত করা চালের মধ্যে কোনো-কোনো ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া গেছে। এ কারণে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সতর্ক করে দিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
জানা গেছে, এ বছর বোরো মৌসুমে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সেদ্ধ ও ৩৯ টাকা কেজি দরে এক লাখ ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। গত ৮ মে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে ‘সারাদেশে বোরো চাল সংগ্রহ-২০২১’ এর উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত মোট ছয় লাখ ২২ হাজার টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে, সংগ্রহ করা চালের মান যাচাই করতে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করেছেন খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তাদের পরিদর্শনে উঠে আসে, নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি নষ্ট ও বিবর্ণ দানা পাওয়া যাওয়ার তথ্য। এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে দেশের সব আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে। গত ১৫ জুন এবং ৭ জুলাই অধিদফতর থেকে দেশের সব আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর এ সংক্রান্ত দুটি চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে মাঠ পর্যায়ের খাদ্য গুদামগুলো পরিদর্শন করেছেন। তারা চলতি বোরো মৌসুমে সংগৃহীত গুদামে মজুদ করা চালের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনষ্ট ও বিবর্ণ দানার আধিক্য প্রত্যক্ষ করেন, যা মোটেও কাম্য নয়। চাল সংগ্রহের বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ এ ধান-চালের বিনির্দেশ সবিস্তারে উল্লেখ রয়েছে।
এমতাবস্থায় চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ‘অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭’ -তে বর্ণিত ধান-চালের বিনির্দেশ যথাযথ অনুসরণ করে ধান-চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হল। বিনির্দেশ বহির্ভূত ধান-চাল সংগ্রহ করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
‘অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭’ অনুযায়ী, সেগুলো বিনষ্ট দানা, যেগুলো আস্ত বা ভাঙা দানা কীটাক্রান্ত অথবা পানি, ছত্রাক বা অন্য কোনো উপায়ে দৃশ্যত বিনষ্ট। আর যেসব আস্ত বা ভাঙা দানার স্বাভাবিক বর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে সেসব হচ্ছে বিবর্ণ দানা।
বিনির্দেশ অনুযায়ী, সেদ্ধ চালের ক্ষেত্রে শতকরা শূন্য দশমিক পাঁচ ভাগ ও আতপ চালের ক্ষেত্রে শতকরা এক ভাগের বেশি বিনষ্ট থাকা যাবে না। আর বিবর্ণের ক্ষেত্রে এ হারও একই। সিদ্ধ চালের ক্ষেত্রে শতকরা শূন্য দশমিক পাঁচ ভাগ ও আতপ চালের ক্ষেত্রে শতকরা এক ভাগ বিবর্ণ দানা থাকা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) শেখ মুজিবর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেজন্য আমরা সতর্ক করে দিয়েছি। কেউ অনিয়ম করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে ধান-চাল সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। এজন্য আমাদের কর্মকর্তারা মনিটরিংও করছেন। সপ্তাহে-সপ্তাহে সবাইকে নিয়ে মিটিং করা হচ্ছে।
এদিকে, ধান-চাল সংগ্রহ সফল করতে গত ৬ মে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ না করলে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
পরিপত্রে একটি নির্দেশনায় বলা হয়, ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য ‘অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা-২০১৭’ অনুসারে ২০২১ সালে উৎপাদিত বোরো ধান-চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরেকটি নির্দেশনায় বলা হয়, ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালের মান নিয়ে আপস চলবে না। কেউ অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এসএইচআর/আরএইচ