গরু আছে, ক্রেতা নেই

রাজধানীতে ১৭ জুলাই অর্থাৎ আগামীকাল শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট শুরু হবে। এরইমধ্যে হাটে অনেক গরু এসেছে। অন্যান্য বছর যেমন নির্ধারিত সময়ের আগেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়, এবার কিন্তু তেমনটি হয়নি। হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক গরু থাকলেও ক্রেতাদের সংখ্যা খুবই কম।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর ভাটারা (সাইদনগর) বালুর মাঠ পশুর হাটে এমনই চিত্র দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা গরু নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অথচ ক্রেতার উপস্থিতি নেই বলেই চলে। বিক্রেতারা বলছেন, হাটে গরু আছে, ক্রেতা নেই। অন্যান্যবারের এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বেচাকেনা হচ্ছে না। তবে তারা আশা করছেন, নির্ধারিত সময়ে হাট শুরুর পর ক্রেতারা হাটে আসবেন।
পাবনা থেকে নয়টি গরু নিয়ে বালুর মাঠ পশুর হাটে এসেছেন তমিজ আলী। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তিন হলো হাটে এসেছি। এই তিন দিনে নয়টি গরুর একটিও বিক্রি করতে পারিনি। হাটে ক্রেতাই নেই। তবে আশা করা যায়, আগামী রোববার, সোমবার হাটে ক্রেতাদের ভিড় হবে। তবে এখন যারা আসছেন, তারা গরুর দামও ঠিকঠাক বলছেন না।
প্রতিবছর রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটগুলোয় উপচেপড়া ভিড় হয়। করোনা পরিস্থিতিতে পশুর হাটের আমেজে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। গত বছর করোনার সংক্রমণ রোধে রাজধানীর সব পশুর হাটে জনসমাগম নিয়ন্ত্রিত ছিল। চলতি বছর ঈদুল আজহার সময়ে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীতে কোরবানির পশুর হাটগুলো বসেছে। হাটে আসা অনেকে মনে করছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই অন্যান্যবার যেভাবে পশুর হাট জমে ওঠে, এবার তেমনটা হচ্ছে না করোনার কারণে।
বালুর মাঠ হাটে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, হাটে এখনও ক্রেতার ভিড় শুরু হয়নি। তবে গরু আছে অনেক পরিমাণে। এবার সবাই এসে শুধু মাঝারি গরু খুঁজছেন। মাঝারি গরুর চাহিদা এবার বেশি। এছাড়া লাল গরু বেশি চাহিদা। ১০টি গরু এনেছি। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে একটি। দুই লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর সর্বোচ্চ দাম বলছে দেড় লাখ টাকা! এবার হাটের অবস্থা যে কোন দিকে যায়, তা এখনও অনুমান করা যাচ্ছে না।
কুষ্টিয়া থেকে চারটি গরু হাটে এনেছেন বিক্রেতা রেন্টু মিয়া। তিনি বলেন, হাটে এখনও ক্রেতার উপস্থিতি তেমন নেই। আগামী রোববার থেকে হাট জমতে পারে। এ পর্যন্ত কেউ সঠিকভাবে গরুর দাম বলছেন না। দুই লাখ ২০ হাজার টাকার গরুর দাম এক লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আরও দু-একদিন পর হাটের হালচাল সঠিকভাবে বোঝা যাবে। হাটে পর্যাপ্ত গরু এসেছে এবার। কিন্তু ক্রেতারা সেভাবে এখনও আসতে শুরু করেননি।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবার দুটি স্থায়ীসহ ২৫টি হাট বসাতে চাইলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় হাটের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। সে অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাবতলী স্থায়ী হাট ছাড়াও আরও নয়টি অস্থায়ী হাট বসানো হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সারুলিয়া স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও আরও ১০টি অস্থায়ী হাট বসিয়েছে তারা। স্থায়ী-অস্থায়ী সব মিলিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এবার ২১টি হাট বসছে। দুই সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই (ঈদের দিন) পর্যন্ত হাট চলবে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অংশে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাব নগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি এইচ, সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গায় অস্থায়ীভাবে কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
এছাড়াও গোলাপবাগের ডিএসসিসি মার্কেটের পেছনের খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধুপখোলা ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় অস্থায়ীভাবে গরুর হাট বসেছে। এছাড়াও সারুলিয়া স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অংশের গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন ৩ এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ, ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদনগর) বালুর মাঠ, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা এবং উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গায় অস্থায়ীভাবে পশুর হাট বসেছে।
এএসএস/আরএইচ