টিকা ব্যবস্থাপনায় ৫ সদস্যের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই জাতীয়ভাবে টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। প্রথম দফায় ৫০ লাখ মানুষকে এ টিকা দেওয়া হবে। এদিকে, টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত করতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম-২০২১’ গঠন করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ টিম গঠনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। টিমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা) নীলুফার নাজনীনকে আহ্বায়ক ও মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব আনজুমান আরাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এ পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে- বাংলাদেশ সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব মাসুদুর রহমান মোল্লা, জাতীয় পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের ডিপিএম ডা. মফিজুল ইসলাম বুলবুলকে।
সুষ্ঠুভাবে করোনা টিকার ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পক্ষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, আইইডিসিআর’বি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ এবং ভার্চুয়াল বৈঠক করবে এ কমিটি।
টিকা এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত দেশ-বিদেশের সকল তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমকে। এ কমিটি গৃহীত কার্যক্রম ও অন্যান্য জরুরি বিষয়ে প্রতিদিন স্বাস্থ্য সচিবকে অবগতি করার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে।
প্রয়োজনে কমিটিতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানোরও এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
টিকা পেতে অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন
করোনাভাইরাসের টিকা পেতে প্রত্যেকেই অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতার সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবেন, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, আইসিটি ডিভিশন অ্যাপস তৈরির কাজ করছে। অ্যাপ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
অ্যাপসের মাধ্যমে প্রত্যেককেই ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
২৫ জানুয়ারির মধ্যেই ভ্যাকসিন আসবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চলতি (জানুয়ারি) মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আসবে।
তিনি বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো আমাদের জানিয়েছে, সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের ভ্যাকসিন দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাব।
তিনি আরও জানান, মোবাইল ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে থেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। অ্যাপটা সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে। যারা টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, তাদেরও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
কীভাবে নিবন্ধন হবে?
স্মার্ট মোবাইল ফোনে ডাউনলোডের পর ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে নিজেরা নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধন করার সময় নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা রয়েছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। তবে কারা আগে টিকা পাবেন, সেই অগ্রাধিকারের তালিকাটি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও সংগ্রহ করা হবে।
প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ পাবেন। তাদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিতও অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে। প্রতিবেশী ভারতেও টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে এরকম একটি অ্যাপের ব্যবহার করা হচ্ছে।
কোথায় পাওয়া যাবে অ্যাপ
অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল-উভয় স্টোরেই এ অ্যাপটি পাওয়া যাবে। স্মার্ট ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ-টু-আই ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এ অ্যাপটি তৈরির কাজ শেষ করেছে। এখন চলছে, শেষ মুহূর্তের মডিফিকেশন বা রূপান্তরের কাজ।
টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরুর অন্তত দু'সপ্তাহ আগে অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা।
টিআই/এমএইচএস