নিরপরাধ মিনুর জেলখাটা : কুলসুমীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বিনা অপরাধে মিনু আক্তারকে জেলে পাঠানোর ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কুলসুম আক্তার আক্তার কুলসুমীসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কুলসুমী ও তার সহযোগী মর্জিনা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) কোতোয়ালী থানার এসআই আকাশ মাহমুদ ফরিদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পেনাল কোডের ১৮৬০ এর ৪১৯/১০৯ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। দুজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কুলসুমা আক্তার, মর্জিনাসহ আরও কয়েকজন মিলে মিনুকে প্ররোচনা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে নিরপরাধ মিনুর কারাগারে যাওয়ার পেছনে কাদের হাত ছিল।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজামউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে কুলসুমকে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার সহযোগী মর্জিনাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এ মামলার রায়ে আসামি কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের দিন কুলসুম আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
প্রকৃত আসামি কুলসুম আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। সাজা ঘোষণা হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম সেজে মিনু আক্তার কারাগারে আসেন। চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠানো আসামির সঙ্গে প্রকৃত আসামির মিল নেই। এছাড়া কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই।
এ আবেদনের শুনানি শেষে কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু, তিনি কুলসুম নন।
আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামি কুলসুম ও সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় মিল খুঁজে পাননি। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি নথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঠিয়ে দেন।
পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে প্রকৃত আসামি কুলসুমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই কুলসুমকে গ্রেফতারে কাজ করছিল পুলিশ। অবশেষে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আসামি না হয়েও তিন বছর সাজা খেটে ১৬ জুন বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান নিরপরাধ মিনু। যাদের কারণে প্রায় ৩ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, কারাগার থেকে বের হয়ে তাদের বিচারও দাবি করেছিলেন মিনু আক্তার। পরে ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু।
কেএম/ওএফ