কৌশলে যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ছে মাইক্রো-মিনিবাস

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর মোড়, সড়কের ডান পাশে তেলের পাম্প। পাম্পের সামনেই কয়েকটি মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হবে, কোনো কাজে বা তেলের পাম্পে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে।
এসব পরিবহন মূলত উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রী নিয়ে যেতে অপেক্ষা করছে। যাত্রী পেলেই এসব পরিবহন আব্দুল্লাহপুর ছেড়ে যাচ্ছে। পাম্পের বিপরীত পাশ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে এসব পরিবহনে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বিধিনিষেধের মধ্যেও মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধিক পরিবহনকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। যাত্রী পরিবহনে মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসের চালকরা ব্যতিক্রম এ কৌশল অবলম্বন করছেন। কৌশলে যাত্রী পরিবহনে তাদের সহযোগিতা করছেন আব্দুল্লাহপুর লোকাল বাস টার্মিনালের কয়েকজন।
একটি মিনিবাসে রংপুরে যেতে টিকিট কেটেছেন মো. বিপুল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৮০০ টাকায় টিকিট কেটে এ মিনিবাসে রংপুর যাচ্ছি। পারিবারিক কারণে জরুরিভাবে যেতে হচ্ছে। ভাড়া একটু বেশি নিলেও যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটাই অনেক বড় ব্যাপার। বাড়িতে না যেতে পারলে খুব সমস্যা হতো।
তিনি আরও বলেন, অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। এখন মিনিবাসটি ছাড়বে। তার মতো অনেকেই যাচ্ছেন এ পরিবহনে। এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল কিংবা সিরাজগঞ্জ যেখানেই যান না কেন ভাড়া কাছাকাছিই।
সরেজমিনে দেখা যায়, আব্দুল্লাহপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় ভিআইপি বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে। সড়কের কোল ঘেঁষে লোকাল গাড়ির কয়েকটি কাউন্টার খোলা রয়েছে। সেখানে অনেকটা প্রকাশ্যেই যাত্রীদের ডাকছেন সংশ্লিষ্টরা। আসন পূর্ণ হয়ে গেলে হয় পেট্রোল পাম্পের সামনের কোনো গাড়িতে যাত্রীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে, কিংবা কাউন্টারের সামনে থেকেই দ্রুত যাত্রী তুলে নিয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত পরিবহন।
এসব গাড়ির চালকদের টার্গেট রংপুর, টাঙ্গাইল, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার যাত্রী। যাত্রীদের অনেকে ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি করছেন, আবার অনেক কোনো কথা ছাড়াই গাড়িতে উঠে পড়ছেন। দর কষাকষি অনেক সময় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছে দুই পক্ষ। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা অতি জরুরি প্রয়োজনেই ঢাকা ছাড়ছেন।
কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যাত্রীবেশে কথা বলতে গেলেও খুব একটা সময় দেয় না তারা। তাদের একটাই কথা, কোথায় যাবেন? গন্তব্যস্থলের নাম বললে, নির্দিষ্ট ভাড়া চেয়ে অন্য যাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা মেলেনি।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে অনেককে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে। তবে তুলনামূলকভাবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা ঢাকায় ফিরছেন, তারা বাসা-কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গণপরিবহন পাচ্ছেন না। ফলে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বাধ্য হয়ে চড়া দামে রিকশা বা ভ্যানে উঠতে হচ্ছে।
রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. সেলিম। তবে গুনতে হয়েছে দেড় হাজার টাকা। তিনি বলেন, এখন ফেনীতে যাব। কিন্তু কোনো গণপরিবহন পাচ্ছি না। এদিকে আবার অফিস খোলা। যেতে হবে দ্রুত। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু পরিবহন সমস্যা মেটাতে পারছি না। কী যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না। কর্মস্থলে যেতে না পারলে চাকরি থেকে বিদায় করে দিতে পারে।
একে/আরএইচ