নারী কাজি নিয়োগের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি ৬৭ সংগঠনের

নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি পদে নারীকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে ৬৭ নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে লক্ষ্য করছি নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নারীর দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় বলে আইন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই বিষয়টি আমাদের সংবিধান পরিপন্থী। তাই হাইকোর্টের এই রায়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
যখন সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশ যখন রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হচ্ছে, আমাদের দেশের নারীরা যখন ইতিবাচক, উৎপাদনমূলক, দায়িত্বশীল, দায়বদ্ধ, সাহসী ভূমিকা পালন করছে, সে সময় নারীর প্রতি নেতিবাচক এই ধরণের একটি রায় অত্যন্ত দুঃখজনক।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এই বিধিনিষেধসহ হাইকোর্টের রায় সংবিধানে প্রদত্ত নারীর অংশগ্রহণের অধিকারকে বাধাগ্রস্থ করবে বলে মনে করে। তাই রায় পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছে।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ৬৪ সদস্য হচ্ছে- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্টেপস টুয়াডর্স ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, ব্র্যাক, উইমেন ফর উইমেন, কেয়ার বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, জাতীয় শ্রমিক জোট, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, আইইডি, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, নিজেরা করি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএ, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন, অক্সফাম জিবি, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ, আওয়াজ ফাউন্ডেশন, প্রিপ ট্রাস্ট, এডিডি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ভিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান, নাগরিক উদ্যোগ, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ, সারি, বাউশি, পাক্ষিক অনন্যা, এসিডি রাজশাহী, ব্রতী, নারী মৈত্রী, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, ইক্যুয়িটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র, জাতীয় নারী শ্রমিক জোট, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় নারী জোট, শক্তি ফাউন্ডেশন, বিপিডব্লিউ ক্লাব, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন, নারী মুক্তি সংসদ, সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ডিআরআরএ, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ইউনিভার্সিটি উইমেন, সরেপটেমিস্ট ইন্টারন্যাশন্যাল ক্লাব, আরডিআরএস, বিল্স, এডাব, এসডিএস জয়পুরহাট, এফপিএবি, ওয়াইডাব্লিউসিএ অব বাংলাদেশ, দলিত নারী ফোরাম, দীপ্ত এ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট, অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্লাস্ট, টার্নিং পয়েন্ট, সেন্টার ফর মেন অ্যান্ড মেসকুলিনিটিজ স্টাডিস, সেভ দ্য চিলড্রেন, অভিযান, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
উল্লেখ্য, হাইকোর্ট রোববার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক রায়ে বলছে যে সামাজিক ও শারিরীক বাস্তবতার কারণে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজি হতে পারবেন না।
এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্ত বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট।
২০১৪ সালে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন নারীর নাম প্রস্তাব করেন উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যর এই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে একই বছরের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যর প্যানেল বাতিল করেন।
পরে আইন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলে এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা।
রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করেছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।
জেইউ/ওএফ