রিকশার দখলে মিরপুর

চলমান কঠোর বিধিনিষেধে গণপরিবহনসহ জরুরি ছাড়া সব ধরনের পরিবহন ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে কোনো বাধা নেই। যার ফলে মিরপুরের সড়কগুলো রিকশার দখলে রয়েছে। গণপরিবহন না চলায় কর্মমুখী মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এই রিকশা। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে কর্মজীবীদের।
রোববার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর ১, ২, ১০ ও ১১ নম্বর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিধিনিষেধের মধ্যে প্রতিদিনই কর্মজীবী বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের অফিসে ছুটতে হচ্ছে। গণপরিবহনসহ সিএনজি ও লেগুনা না চলায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশায় যেতে হচ্ছে সবাইকে। আবার যেসব মানুষ গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসছে তাদেরও গন্তব্যে যেতে রিকশার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গাবতলী এলাকায় রিকশা আর ভ্যান ছাড়া অন্য গাড়ি না থাকায় বেশি ভাড়াতেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে কর্মজীবীদের। তবে আমিনবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে সহজেই মিলছে প্রাইভেটকার, ট্রাক, মাইক্রোবাস, পিকআপ।

সুমন নামের এক প্রাইভেট কোম্পানির চাকরিজীবী অফিসে যেতে বের হয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। কারণ, সরকারের বিধিনিষেধ থাকলেও আমার অফিস চলছে। এজন্য প্রতিদিন মিরপুর-১ থেকে রিকশা নিয়ে অফিসে যাই। ভাড়া বেশি লাগলেও অফিসে যেতে হবে। কারণ অফিসের নিজস্ব কোনো গাড়ির ব্যবস্থা নেই। যার ফলে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এবং প্রতিদিনই অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।
মিরপুর-২ থেকে আলামিন নামের এক কর্মজীবী বাড়ি যেতে রওনা হয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। পারিবারিক কাজে আমাকে বাড়ি যেতে হচ্ছে। কিন্তু গাড়ি না থাকায় রিকশায় করে যাচ্ছি। গাড়ি চললে ১০ টাকা ভাড়া দিয়েই গাবতলী যাওয়া যেত। এখন রিকশায় ১২০ টাকা ভাড়ায় যাচ্ছি। গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে মাইক্রোবাস বা ট্রাকে করে যাব।
তুহিন নামের আরেকজন কর্মজীবী গাবতলী থেকে যাবেন মিরপুর রূপনগর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাতে ট্রাকে করে রাজধানীতে এসেছেন। গাড়ি না থাকায় তিনিও গন্তব্যে যেতে রিকশার দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি রূপনগরের আরমাবাগে কাজ করি। ৮০০ টাকা দিয়ে ট্রাকে করে ঢাকায় এসেছি। এখন গাবতলী থেকে রূপনগর যেতে রিকশার ভাড়া চাইছে ১৫০ টাকা। গাড়ি চলাচল করলে ১০ টাকায় যেতে পারতাম।

রিকশাচালক শহিদুল নামের একজন বলেন, লকডাউনের প্রথম দিকে ভাড়া কম হতো। কিন্তু ইদানিং বেশি হচ্ছে। কারণ প্রথম দিকে মানুষ কম বের হতো। কিন্তু এখন সকালে অফিস যাত্রীদের চাপ থাকে। যার ফলে আমাদের ভাড়াও বেশি হচ্ছে। তবে গাড়ি চলাচল শুরু হলে আমাদের ভাড়া আবারও কমে যাবে।
গত ৩ আগস্ট ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, শপিংমলসহ গণপরিবহন খুলে দেওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হবে।
এর আগে করোনার সংক্রমণ রোধে সব ধরনের অফিস বন্ধ রেখে গত ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করে সরকার। এরপর কোরবানির ঈদের আগে গত ১৫ জুলাই থেকে আট দিনের জন্য সব বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়া হয়। পরে আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তবে এরমধ্যেই গত ১ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে রফতানিমুখী শিল্প ও কলকারখানা।
এসআর/এইচকে