জঙ্গিবাদ শুধু বন্দুকে নির্মূল সম্ভব নয়: র্যাব এডিজি

র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেছেন, জঙ্গিবাদ একটি ধারণা, বিশ্বাস। এটা হৃদয়ে থাকে। শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে যা দূর করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) র্যাব সদর দপ্তরে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান ‘নব দিগন্তের পথে’ প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
র্যাব অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা যাদের সন্ত্রাসী বলি, সবাই সন্ত্রাসী নয়। কারো মনে সামান্য সহানুভূতি থাকে। এক পর্যায়ে সাপোর্টার হয়ে যায়। এরপর অ্যাকটিভিস্ট হয়, সে তখনও সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হয়ে যায় না। এরপরের ধাপে এক্সট্রিমিস্ট হয়। এই পর্যায়ে সে অন্য কারো মতাদর্শকে মানতে চায় না। এক্সট্রিমিস্ট হওয়ার পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। তখন সবাইকে শত্রু মনে করতে থাকে।’
‘তার ভ্রান্ত ধারণাকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটা সে বিশ্বাস করে। তার ধারণায় আঘাত করতে হবে। যেটা শুধুমাত্র বন্দুক দিয়ে সম্ভব নয়। দরকার হয় ডি-রেডিকালাইজেশন। এক্সট্রিমিস্ট থেকে টেররিস্ট হয় একজন ব্যক্তি। তখন কোনো একটি নাশকতামূলক কাজের জন্য রওনা দেয়’।
ডি-রেডিকালাইজেশনের কয়েকটি ধাপ উল্লেখ করে কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, ‘প্রথমে এই রেডিকালাইজড হওয়া ব্যক্তিদের স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট করতে হবে। তাদের সক্ষমতা নষ্ট করতে হবে। তার গ্রুপের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে অর্থাৎ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাকে ধরে আনতে হবে।’
তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে বিচারের মুখোমুখি না ডি-রেডিকালাইজেশনে সম্পৃক্ত করতে হবে, তা নিয়ে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যারা ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে তাদের মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক সাপোর্ট দিতে হবে, বলেন এডিজি।
জঙ্গি দমন প্রক্রিয়ায় সমাজের সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার বলেন, আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই মিলে কাজ করলে তা হবে মাত্র ২৫.৭ শতাংশ কাজ। সমাজের সবাইকে নিয়ে এই ভয়াল দৈত্যকে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটা ধারণা, বিশ্বাস। এটা হৃদয়ে থাকে। শুধু বন্দুক দিয়ে বা অপারেশন করে তা দূর করা যাবে না। তবে শুরুতে অপারেশনাল পন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেহেতু আমরা এই পন্থায় সফল হয়েছি তাই এবার আমরা এই জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে একটা বাতায়ন খুলে দিতে চাই। যারা শুধুমাত্র মানসিকভাবে দূষিত হয়েছে তারা যেন আলোর পথে আসতে পারে। তারা অগ্রদূত হয়ে যেন অন্যদের এই পথে নিয়ে আসে।
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের।
জঙ্গি দমনে সবচেয়ে সফল পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের সহযোগীতায় এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন নয় জঙ্গি।
জেইউ/জেডএস