নিখোঁজ শ্রমিকদের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ শ্রমিকদের বিষয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটি। কমিটি বলছে, হাসেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ডে শিশুসহ (শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করত) অনেক শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আমরা নিখোঁজ শ্রমিকদের ব্যাপারে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সোমবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আহ্বান জানান সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ছারোয়ার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, হাসেম ফুডস কারখানায় সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে কারখানায় শিশু শ্রমের মতো অপরাধমূলক কাজ করে আসছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া কারখানাটির যথাযথ লাইসেন্স না থাকা, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণসহ কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কারখানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গোলাম ছারোয়ার বলেন, সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাই। এ তদন্ত প্রতিবেদনে সজীব গ্রুপের কারখানায় কর্তৃপক্ষের আইন লঙ্ঘন, শিশু শ্রমিক নিয়োগ, অনিরাপদ কর্মসংস্থান, বিপদজনক কর্মপরিবেশ বজায় রাখাসহ কোম্পানির ধারাবাহিক নানা অপরাধমূলক অনিয়ম ও অবহেলার কারণে এ শ্রমিক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিষয়ে সজীব গ্রুপ ওয়ার্কার্স জাস্টিস কমিটির বক্তব্য নিশ্চিত করেছে ও প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনের মাধ্যমে এটি পরিষ্কার- সজীব গ্রুপের কারখানাটিতে কি ঘটেছিল এখন সবার জানা দরকার।
তিনি বলেন, কেন ওই কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োজিত ছিল? কেন সেখানে অনিরাপদ কর্মসংস্থান ছিল? সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ কেন সজীব গ্রুপের কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শোভন কাজ নিশ্চিত করতে পারেনি? কেন সজীব গ্রুপ কর্তৃপক্ষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিয়ম কানুন আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছে? কেন হাসেম ফুড কর্তৃপক্ষ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের অগ্নিনিরাপত্তা প্লাম বাস্তবায়ন করেনি?
জাস্টিস কমিটির এ সদস্য বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সজীব গ্রুপের অনিয়মসহ ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ডরোধে যে ২০টি সুপারিশ দিয়েছে সেগুলোকে আমরা গঠনমূলক মনে করি। তবে নিহত ও আহত তথা ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাই। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে যথাযথ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি হাসেম ফুডস এ কর্মরত সব শ্রমিকে বকেয়া বেতন, বকেয়া ওভারটাইমসহ তাদের প্রতি মাসের বেতন পরিশোধ করার দাবি জানাই।
তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নিহত শ্রমিক পরিবারের কোনো সদস্যকে সজীব গ্রুপের অন্য ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সুপারিশ একটি ভালো সমাধান। তবে আমরা মনে করি সজীব গ্রুপের অন্য কারখানায় নিহত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যের কর্মসংস্থানের আগে সজীব গ্রুপের সব কারখানায় বিপদজনক কর্মপরিস্থিতি, শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বাংলাদেশ শ্রমআইন এবং শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন ও তাদের অপরাধমূলক অবহেলার বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্ত করার জন্য পুনরায় সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, সদস্য আবুল কালাম আজাদ, লীনা খানম, সবিতা, মামুন হোসেন প্রমুখ।
এমএইচএন/এসএসএইচ