নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াইয়ের বিকল্প নেই

নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে লড়াই ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই বলে মনে করে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। তাই যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও নারীর মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে সবাইকে শামিল হাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেত্রী রোকসানা আফরোজ বলেন, করোনা মহামারির কারণে সারাদেশ বিপর্যস্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত নারীরা। মহামারিকালে নারী-শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও বাল্যবিবাহ বেড়েছে ভয়াবহ। নারীদের চাকরি বা কাজ হারানোর হার অত্যন্ত বেশি। পারিবারিক নির্যাতন বেড়েছে কয়েক গুণ। মজুরিহীন গৃহস্থালির কাজের চাপ বেড়েছে অনেক বেশি। এর বিপরীতে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সুরক্ষা আরও কমেছে। সারা দেশের থানাগুলোয় দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতর অপরাধের যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে তাতে দেখা যায়, ২০২০ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ৫৫৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ দেশে দৈনিক গড়ে ১৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৫ হাজার ৮৭২টি।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে বাল্যবিবাহ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ৩ আগস্ট খবরে বলা হয়, করোনা মহামারির মধ্যে গত ১৮ মাসে যশোরের কেশবপুর উপজেলায় তিন হাজার বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। অভিভাবকের অসচেতনতা, আর্থিক অনটন, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকদের মনিটরিং না থাকা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়ে চলছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্যও পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রকৃতপক্ষে বাল্যবিবাহের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
এ নারী নেত্রী বলেন, একদিকে বেড়েছে ধর্ষণ, নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, অন্যদিকে কাজ হারিয়ে নারীরা হয়ে পড়েছেন আরও বেশি অসহায়। বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, ঢাকা এবং অন্যান্য শহরের ৫৪ শতাংশের বেশি গৃহকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। এসব কাজ হারানো নারীদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ বিকল্প পেশায় নিযুক্ত হতে পেরেছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু গৃহকর্মী নন; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী নারী, দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক, বেতনভুক্ত চাকুরে- চাকরি হারানোর তালিকায় সব পেশার নারীরাই আছেন। দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করছে তখন দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর জীবন চিত্র এমনই। এই দৃশ্যপট বদলাতে হলে, নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হলে লড়াই ভিন্ন কোনো উপায় নেই ।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় নেত্রী পারভীন আক্তার, মুক্ত বাড়ৈই, জয়ত্রী প্রমুখ।
এমএইচএন/এসকেডি