‘নামিদামিদের বান্ধবী-বাড়ির কথা শুনে হাত-পা কাঁপে’

উন্নয়নের আড়ালে বৈষম্য বাড়ছে স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমাদের দোষারোপ করা হয়, উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু বৈষম্য বেড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার ছিল, এখন হয় তো ২২ হাজার পরিবার আছে। হতে পারে, আমার হাতে হিসেব নেই। বৈষম্য বাড়ছে, এটা অস্বীকার করার উপায়ও নেই।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে খবরের কাগজে এত রোমাঞ্চকর গল্প ব্যক্তি সম্বন্ধে উঠে আসে যে, এতগুলো বান্ধবী, এতগুলো বাড়ি, এতগুলো গাড়ি। এগুলো শুনলে আমার হাত-পা কাঁপে।’
শনিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ‘ব্যাংকিং পলিসি অব বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর নানা দেশে আমাদের বড় বড় বাড়ি আছে। আমরা যে বেশ সক্ষম হয়ে গেছি এটাই এর প্রমাণ। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার আগে আমাদের পাওনাটা দিয়ে যান, তাহলে তো আর কোনো আপত্তি থাকে না। এ দেশের সমস্ত সম্পদ জনগণের অংশ। এ জন্য বলি, যদি এক পয়সার হকও দেশের জনগণ পায় তাহলে সেটা দিয়ে দেন। বাকি ৯৯ পয়সা নিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি, বিদেশে টাকা নিয়ে সুখে খান। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হকের টাকা তো দূরের কথা, ব্যাংক থেকে যে পুঁজিটা (ঋণ) নিয়েছিলেন, সেটার সুদসহ নিয়ে বিদেশে চলে যান।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সাঁকোর দেশে পদ্মা সেতু, সাঁকোর দেশে বঙ্গবন্ধু সেতু, সাঁকোর দেশে টানেল। এগুলো বিশাল অর্জন আমাদের জন্য। সব রেললাইনকে আমরা ডাবল ট্রাক করব। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের প্রায় বৃহদাংশ করে ফেলেছি, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ প্রায় হয়ে গেছে। এটা ডাবল ট্র্যাক হয়ে যাবে। ডুয়েলগেজ করব আবার। বিশাল পরিকল্পনা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর। রূপপুরের পারমাণবিক প্রকল্পটি প্রযুক্তির দিক থেকে অত্যন্ত আধুনিক। আকাশে আমাদের স্যাটেলাইট উড়ছে, এটা আমি নিজেও কখনও ভাবিনি যে এটা সম্ভব হবে আমাদের দিয়ে। প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উড়ছে, দ্বিতীয়টাও উড়বে। সুতরাং দুর্বল ভাবার কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে খবরের কাগজে এত রোমাঞ্চকর গল্প ব্যক্তি সম্বন্ধে উঠে আসে যে, এতগুলো বন্ধবী, এতগুলো বাড়ি, এতগুলো গাড়ি। এগুলো শুনলে আমার হাত-পা কাঁপে। কিন্তু এটা সম্পর্কে আমাদের সতর্ক, সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। এখন দেশের উচ্ছ্বাসের সময়, এ সময় নানা ধরনের বাড়াবাড়ি হবে। এটা সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং আইন যেন প্রয়োগ করতে পারি। আইন যেহেতু আছে, ভয়ের কিছু নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন না, আমার দীর্ঘ জীবনে এত পত্রিকা আমি জীবনে কখনও দেখিনি। প্রতিদিন আমার অফিসে নতুন নতুন কাগজের সাংবাদিক ভাইয়েরা আসেন। কেউ বলে সকালের খবর, দুপুরের খবর, বিকালের খবর, রাতের খবর, সন্ধ্যার খবর, শেষ রাতের খবর, নানা ধরনের নামে। আমার আপত্তি নেই। আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এখন মানুষকে পত্রিকা পড়তে দেখছি না, কম পড়ে আগের তুলনায়। আমি নিজেও পড়ি না। সেখানে কাগজগুলো কোথায় বিক্রি হয়, এটা মাঝেমাঝে প্রশ্ন ওঠে। আমি বুঝে উঠতে পারি না। যাইহোক, আমরা সম্মান করি। কারণ আমাদের সরকার চিন্তায় মুক্ত প্রকাশে বিশ্বাস করে। শুধু বাধা একটিই আছে, সেটা হলো আমাদের স্বাধীনতা, সম্মান, আত্মপরিচয় এগুলোকে নিয়ে আক্রমণ না করে যা ইচ্ছা করেন।’
‘প্রধানমন্ত্রী একনেকে প্রত্যেকটা প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন করেন, এই প্রকল্পটা অনুমোদন করলে কার উপকার হবে, নারীরা কী পাবে, শিশুরা কীভাবে উপকৃত হবে এবং গ্রামের লোকের উপকার পাবে কি না ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। এরপরও আমাদের অনেক বদনাম আছে। আপনারা সাংবাদিকরাই সেগুলো প্রকাশ করেন। আমরা সেগুলো অ্যাপ্রিসিয়েট করি। এতে আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আপনাদের দেয়া তথ্য নিয়ে আমরা অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনা করি। আপনারা আরও বেশি করে করেন। আমরা আহ্বান করি, দুর্নীতি যে জায়গায় চিহ্নিত করছেন, বালিশকাণ্ডেই হোক বা যেকোনো কাণ্ডেই হোক, এতে আমরা কুণ্ঠিত নই।’
এসআর/এফআর