জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে র্যাবের হটলাইন

জঙ্গিবাদ দমনে শুরু থেকে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। দমন নয় বরং পথভ্রষ্ট জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেও কাজ করে যাচ্ছে র্যাব। সর্বশেষ জঙ্গিবাদ ছেড়ে র্যাবের সহায়তা আনুষ্ঠানিকভাবে আলোর পথে ফিরেছেন ৯ জঙ্গি।
এরই ধারাবাহিকতায় পথভ্রষ্ট জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে র্যাব। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে র্যাব নতুন হটলাইন চালু করেছে। হটলাইনে দেওয়া ইমেল ও ফোন নম্বরে র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে পলাতক জঙ্গিরা আত্মসমর্পণের সুযোগ পাবেন। এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে র্যাব।
হটলাইনের ইমেইল আইডি: [email protected]। আর হটলানের ফোন নম্বরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে বলে র্যাব থেকে জানানো হয়।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হটলাইনটি সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এর মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিরা র্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাদের প্রথমে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও ৯ জঙ্গি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আত্মসমর্পণ করছেন। জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে এই হটলাইন নতুন আঙ্গিকে চালু করা হয়েছে। পথভ্রষ্ট হয়ে জঙ্গিবাদের দিকে চলে যাওয়া অনেকে এখন মনে করছেন তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জঙ্গিবাদের পথ ছেড়ে যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, পরিবারের কাছে ফিরতে চান তাদের জন্য এই হটলাইন। তাদের পরিচয় গোপন রেখে আমাদের সঙ্গে হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন। আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য তাদের আমরা সুযোগ দিতে চাই।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর র্যাব সদর দফতরে 'নব দিগন্তের পথে' শীর্ষক অনুষ্ঠানে ৯ জঙ্গি আত্মসমর্পণ করনে। আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের মধ্যে ৬ জন জেএমবির ও ৩ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, উন্নয়নের রোল মডেলের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনেও বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। চরমপন্থি বা জলদস্যু যারাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছে তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল তারা আজ মা-বাবার কাছে ফিরেছেন। তাদের মুখে হাসি ফুটিছে যা অনেক দিন পর দেখছি। দেশের মানুষ এ দৃশ্য দেখবে। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ আত্মসমর্পণ করা জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছে তাদের অভিনন্দন। তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এই ধারা বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যারা সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদেরকে এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে। তুই জঙ্গি বলে যেন তাকে আবারো নেতিবাচক পথের দিকে যেন ঠেলে দেওয়া না হয়।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা, এটা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারার ফিরিয়ে আনতে চাই। আত্মসমর্পণ করা নয় জনের মধ্যে ৮ জনই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন। একজনকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে, আইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে ফেরত যাবেন তিনি।
র্যাব প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা আভিযানিক কার্যক্রম আরো বেগবান করব। কোথাও জঙ্গিরা টিকে থাকতে পারবে না। যারা এখনো পলাতক আছেন আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।
এমএসি/ওএফ