অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে আড়াই শতাংশ

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের ২.৫৮ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। অর্থবছরটির প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৯.৯০ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে বাজেট ২০২০-২১ : প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস এবং মার্চ-জুন সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১৬.৯৩ শতাংশ কম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে মহামারিজনিত অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২০ সালে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ৯.২ শতাংশ হ্রাস পাবে, কিন্তু ২০২১ সালে তা ঘুরে দাঁড়াবে এবং ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
অর্থমন্ত্রী জানান, বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাসের পূর্বাভাস সত্ত্বেও বর্তমান অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ৯.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৫৮ শতাংশ বেশি। রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়ন ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করতে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার অনুসন্ধান করছে সরকার।
তিনি জানান, কোভিডের সময়ে রপ্তানি সম্ভাবনা রয়েছে এমন পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার নগদ সহায়তা/প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রেখেছে, যাতে এগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মতো বর্তমান অর্থবছরেও ৩৭ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গত অর্থবছর থেকে প্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ১ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, যা বর্তমান অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হয়েছে। মার্চ মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবে সাময়িক বন্ধ ও রপ্তানি কমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি দিতে পারে, সেজন্য সরকার বিশেষ তহবিল দিয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতে, সেবা খাতে বিশ্ববাণিজ্য ক্রমাগত বাড়ছে। সংস্থাটির ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্ববাণিজ্যে সেবা খাতের শেয়ার ৫০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে তাদের শেয়ার ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
সরকার পণ্যের পাশাপাশি সেবা রপ্তানি বৃদ্ধির উপর জোড় দিচ্ছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ডব্লিউটিও’তে চলমান বিভিন্ন আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রযোজ্য সুবিধাগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চলমান আছে। এছাড়া, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে দ্বি-পাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
১১টি দেশের সঙ্গে স্বাক্ষরের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করা হয়েছে জানিয়েছে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার ফলে ভুটানে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। সরকার দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি খাতের উন্নয়নে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্যের গুণগতমান ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করা এবং নতুন নতুন এফটিএ ও পিটিএ সম্পাদনের মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণ নীতি অনুসরণ করছে, যা আগামীতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।
এসআর/এমএইচএস