সন্ত্রাসী ছোটা শাকিল পরিচয়ে ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি

দুবাইভিত্তিক মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন ভারতীয় সন্ত্রাসী ছোটা শাকিল। সেই শাকিলের পরিচয়ে রাজধানী গুলশানের এক ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে এক তরুণ। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ডিবি পুলিশ ওই তরুণের নাম জানায়নি।
ডিবি পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার যুবক ভারতীয় সিনেমা, বিশেষ করে ক্রাইম পেট্রোলের মতো হিন্দি সিরিয়াল দেখে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোটা শাকিলের পরিচয় ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। গ্রেপ্তার তরুণ ওই বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয়ে গাড়িতে নকল বোম রেখে চাঁদা দাবির অভিযোগে বুধবার ওই তরুণকে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবিতে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১১ জানুয়ারি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুলশানের ঢালী সুপার স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ওই তরুণ। টাকা না দিলে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকিও দেয়। পরদিন বিকেলে ওই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারটি পার্কিং করা অবস্থায় গাড়ির ড্রাইভার গাড়ির নিচে বোম সদৃশ বস্তুর উপস্থিতি দেখতে পায়। বিষয়টি বাড্ডা থানা পুলিশ সিটিটিসির বোম ডিসপোজাল টিমকে অবহিত করলে ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে বস্তুটি অপসারণ এবং ধ্বংস করে।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, বস্তুটি একটি অকার্যকর বোমা ছিল। ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। পরে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে ঘটনার মূলহোতাকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তরুণ ডিবিকে পুলিশকে জানিয়েছে, সে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে ৪ হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু বেতন অল্প হওয়ায় এবং দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, অল্প সময়ে ধনী হওয়ার জন্য ২ মাস আগ থেকেই পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে ওই তরুণ। এজন্য সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয় হুমকি ধমকি দেওয়ার কৌশল শিখে। সিনেমা দেখে সে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করে।
এক প্রশ্নের জবাবে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আমার কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসে যে শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয় চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আসলে গোটা বাংলাদেশে বা ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী বলতে কোনো অস্তিত্ব নাই। শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করার পর যদি চাঁদাবাজরা ১০ হাজার টাকা পায় সেটাই তাদের লাভ।
জেইউ/এমএইচএস