‘স্বচ্ছতা’ প্রমাণে নিজস্ব ওয়েবসাইটে ভুয়া তথ্য দিচ্ছে প্রতারচক্র

লন্ডন পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মানবপাচারকারী একটি চক্র। চক্রটি ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি ও মানবপাচারের প্রক্রিয়ার ‘স্বচ্ছতা’ দেখাতে নিজস্ব ওয়েবসাইটে পাসপোর্ট ও ভুয়া ভিসা চেক করার তথ্য দিয়ে বিদেশগামীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে চক্রটির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই বলছে, মানবপাচারের ক্ষেত্রে যারা প্রতারিত হন, তারা সর্বস্বান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের কাছে আসেন না, অভিযোগ করেন না। কখনও কখনও পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সহায়তা না করে তারা পালিয়ে বেড়ান।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
গ্রেপ্তার তিন মানবপাচারকারী হলেন- শাহীন হাসান (৪৯), তারেক মাহমুদ গালিব (২৮) ও বকুল হোসেন ওরফে রতন হাওলাদার (৪৮)। তবে এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন অপর মানবপাচারকারী মিজান ওরফে শাহেদ ছিদ্দিকী।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে অভিযোগকারী ছয় জনেরসহ মোট ১৩টি পাসপোর্ট, দুটি ল্যাপটপ, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেকবই, দুটি প্লাস্টিকের ভুয়া সিল, টিম হর্টনস ও মেনোনাইট নার্সিং হোমস ইনকরপোরেশন-এর নিয়োগপত্রসহ মানবপাচার ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মানবপাচারকারী চক্রটি নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। নিজস্ব ওয়েবসাইটে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে দেখাত যে, ভিসা ও চাকরি ঠিক আছে।
তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ডের ভিসা দেওয়ার পরই প্রমাণ হয় চক্রটি ভুয়া। এই দেশের ভিসা চেক করার জন্য ওয়েবসাইট ডেভেলপ করতে তারা ভুলে যায়। এ সময় ভুক্তভোগীরা ভারতীয় ওয়েবসাইটে আয়ারল্যান্ডের ভিসা চেক করতেই লেখা আসে ‘দিজ ইজ নট জেনুইন’।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল থানায় আলী চৌধুরী নামে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। তিনিসহ তার আরও পাঁচ আত্মীয়কে আয়ারল্যান্ড নেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ছয়টি পাসপোর্ট ও ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। টাকা নেওয়ার পরও ভুক্তভোগীদের হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া ভিসা পাঠিয়ে আরও টাকা দাবি করে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা নিজেদের বিচক্ষণতায় প্রতারকদের কাছ থেকে পাওয়া ভিসাগুলো ভারতের নয়াদিল্লির আয়ারল্যান্ড দূতাবাসে মেইল করে পাঠান। সেখান থেকে জানানো হয় ভিসাগুলো সঠিক নয়।
বনজ কুমার বলেন, এরপরও প্রতারক চক্রটি তাদের কাছ থেকে ভিসা পাসপোর্টের বিনিময়ে আরও টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগীরা পিবিআইকে জানালে তদন্ত করে ঘটনার প্রমাণ পেয়ে চক্রের তিন সদস্যকে মতিঝিলের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর তারা জানান, ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট তাদের কাছে নেই। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর আসামি শাহেদ ছিদ্দিকীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাসপোর্টসহ যাবতীয় প্রতারণার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
পিবিআই প্রধান বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগী লন্ডন যেতে চেয়েছিলেন ১২ লাখ টাকায়। ওই ভুক্তভোগী যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। কারণ ইতিমধ্যে তিনি ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন, বাকি ৪ লাখ টাকা না দিলে লন্ডন যেতে পারবেন না। প্রতারিত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে উল্টো পালিয়ে বেড়ান।
তিনি বলেন, যারা প্রতারিত হন, তারা পুলিশের কাছে আসেন না। তারা মনে করেন, পুলিশের কাছে গেলে তারা লন্ডন যেতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সর্বস্বান্ত না হন, ততক্ষণ পুলিশের কাছে তারা আসেন না।
এএসএস/জেইউ/জেডএস