লরিচাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত, চালক রিমান্ডে

লরির চাপায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির ছাত্র মেহেদী হাসান লিমনের মৃত্যুর ঘটনায় চালক মো. ইউসুফকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালক ইউসুফের অবস্থান নিশ্চিতের পর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে তাকে গ্রেফতার করে। লিমন গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কাজী শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত ৩-৪টার মধ্যে বিমানবন্দর সড়কের লা মেরিডিয়ান হোটেল পার হয়ে পদ্মা গেটের সামনে একটি লরি সামনে থাকা লিমনের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান লিমন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত লিমনের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়।
দুর্ঘটনার পর লরিটি জব্দ করা সম্ভব হলেও পালিয়ে যায় চালক ইউসুফ। ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে সহপাঠীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
চাঞ্চল্যকর ওই দুর্ঘটনার পর ডিবি উত্তরা বিভাগ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগে ও পরে লরি চালক ইউসুফ সড়কে লো প্রেসার থাকলেও হাই রিস্ক নিয়ে লরিটি চালিয়ে আসছিল। দুর্ঘটনার পর সে খুব ঝুঁকি নিয়ে ৪/৫টি সিগনাল ক্রস করে।
ডিবি পুলিশ প্রথমে লরির মালিক ও গার্মেন্টস কনটেইনারের মালিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চালকের নাম পরিচয় ও ঠিকানা নেয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বুধবার রাতে চট্টগ্রাম সন্দ্বীপ থেকে চালক ইউসুফকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি উত্তরা ডিসি কাজী শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর চালক ফোন বন্ধ রাখে, ঘনঘন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে। ঢাকায় ক'দিন কৌশলে বার বার অবস্থান পরিবর্তনের পর সন্দ্বীপে চলে যায়।
রাজধানীতে গত কয়েকদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নটর ডেম শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর রামপুরায় মারা যায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী। গত ৩ ডিসেম্বর রাতে মারা যায় গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান লিমন।
নিহত লিমনের ফুফা মো. ইমাম হাসান ঘটনার পর ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার দিন রাতে ধানমন্ডির জিগাতলার আত্মীয়র বাসা থেকে নিজের বাসা কাউলায় ফেরার সময় একটি লরি লিমনকে চাপা দেয়। তার মাথা ও বুকের ওপর দিয়ে লরি চলে যায়। উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লিমনের খালু মো. ইমাম হোসেন জানান, সে গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামে। তার বাবার নাম মোজাম্মেল হক। লিমন পরিবারের সঙ্গে কাউলা এলাকায় থাকত।
লিমনের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. মোফাজ্জল হোসেন বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন। লিমনরা দুই ভাই, তাদের একটি বোন রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল লিমন। চেয়েছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে।
জেইউ/জেডএস/আইএসএইচ