ঢাবি ছাত্রী ‘হত্যায়’ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি মহিলা পরিষদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ইলমা চৌধুরী মেঘলাকে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থাগ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে সংগঠনটি।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ঢাবির নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ইলমা চৌধুরী মেঘলা রাজধানীর বনানীর ২ নম্বর সড়কের ৪৪ নম্বর বাসায় স্বামী কানাডা প্রবাসী ইফতেখার শাওন কর্তৃক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ইলমা ইফতেখারকে পছন্দ করে পারিবারিক সিদ্ধান্তেই বিয়ে হয়। বিয়ের পরই ভিন্নরূপে দেখা যায় ইফতেখারকে। নৃত্যকলা বন্ধ করতে হবে, বোরকা পরতে হবে, ক্যাম্পাসে যাওয়া যাবে না, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যাবে না, ঘরবন্দি থাকা- এসব বিধিনিষেধ চাপাতে থাকত।
এ নিয়ে কথা বলার সময় ইলমাকে মারধর করত। বিষয়টি ইলমার পরিবার জানার পর ওই সংসার থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও পছন্দের মানুষকে ছেড়ে সে নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর ঘরে থাকতে চেয়েছে।
ইলমার খালু ইকবাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ইফতেখারের মা ফোন করে ইলমা অসুস্থ, তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে দ্রুত সেখানে যেতে। হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ইলমাকে মৃত অবস্থাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তার শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন ও গলায় দাগ আছে বলে জানান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রীকে মারধর করে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে ব্যবস্থাগ্রহণসহ দ্রুত গ্রেফতার, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে। একইসঙ্গে ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানাচ্ছে।
সেইসঙ্গে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সারা দেশে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বনানীতে স্বামীর বাসায় মারা যান ইলমা। ইলমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনই পুলিশকে ফোন দেন।
তারা দাবি করেন, মেঘলা আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃত্যকলা বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ইলমা চৌধুরী মেঘলার (২৪) মৃত্যুর মামলা করেছে তার পরিবার। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ইলমাকে। মামলাটি করেন নিহতের বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
এই ঘটনায় মঙ্গলবারই আটক করা হয় ইলমার স্বামী ইফতেখার আবেদীনকে। আটকের পরপরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। তবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বার বার একই কথা বলছিলেন ইফতেখার। জিজ্ঞাসাবাদে সে দাবি করে, ‘ইলমা আবেগি মেয়ে ছিল, সে আত্মহত্যা করেছে।’
জেইউ/ওএফ
