২০২০ সালে চারজন গৃহশ্রমিককে হত্যা, ১২ জনের রহস্যনজক মৃত্যু

২০২০ সালে মোট ৪৪ জন গৃহকর্মী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২ জনের রহস্যজনক মৃত্যসহ মোট ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
আজ (রোববার) ‘২০২০ সালে গৃহশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি এবং তাদের আইনি সুরক্ষা’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল পর্যালোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বিল্স, গণসাক্ষরতা অভিযান, হ্যালোটাস্ক, নারী মৈত্রী, রেডঅরেঞ্জ ও ইউসেপ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এবং অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে পরিচালিত গৃহশ্রমিকের অধিকার, মর্যাদা ও সুরক্ষায় “সুনীতি” প্রকল্পের আওতায় এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
আজ অনুষ্ঠিত সভায় আরও জানানো হয়, ২০২০ সালে গৃহকর্মী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২ জন। শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চরমভাবে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ১২ জন, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন।
পর্যালোচনা সভায় বক্তারা গৃহকর্মে শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করার ওপর জোর দিয়ে বলেন, প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ে গৃহশ্রমিকদের নিবন্ধন চালু করা জরুরি, যাতে করে প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার পর্যায় থেকে দুর্যোগকালীন সময়ে তাদের সহায়তার বিষয়ে সরকারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।
বিল্স যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আবুল হোসাইনের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিল্স পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন।
মূল প্রবন্ধে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিল্স পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন বলেন, ২০২০ সাল ছিল করোনা পরিস্থিতির কারণে সংকটময় একটি বছর। এই বছর গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ নিশ্চিত করা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। করোনাকালীন সময়ে মৃত্যুভয় থাকার পরও গৃহশ্রমিকদের নির্যাতন তাদের জন্য আরেকটি আতঙ্কের মাত্রা যোগ করেছে।
তিনি দৈনিক সংবাদপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার ষ্টাডিজ-বিল্স পরিচালিত জরিপে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালাকে আইনে পরিণত করতে না পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। শ্রম আইন সংশোধনী কমিটিতে যারা আছেন তাদের এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। আইন হলে সকল নির্যাতনের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম বলেন, গৃহশ্রমিকদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার সবচেয়ে বেশি হন স্থায়ী শ্রমিকরা। যারা খণ্ডকালীন কাজ করেন এবং যারা পূর্ণকালীন কাজ করেন তাদের জন্য পৃথক নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। শিশু গৃহশ্রমিকদের কাজে নিরুৎসাহীত করতে হবে। গৃহশ্রমিকদের একটি পরিচয়পত্রসহ ডাটাবেস থাকলে এ সুবিধা নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজী আব্দুল হান্নান বলেন, সংবাদপত্রে গৃহশ্রমিক নির্যাতনের যে চিত্র আসে তা সামগ্রিক চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্র এর চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ। যেসব নির্যাতনের ক্ষেত্রে মামলা হয় বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় শুধুমাত্র সেসব ঘটনাই সংবাদপত্রে আসে। করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন গৃহশ্রমিকদের বিভিন্ন আবাসিক ভবনে প্রবেশ সীমাবদ্ধ ছিল। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।
নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচাল শাহীন আকতার ডলি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী মৈত্রী গৃহশ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে। এ বিষয়ে আরো প্রচারণা থাকা দরকার। থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে গৃহশ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা দরকার।
সভপতির বক্তব্যে ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, গৃহশ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। গৃহশ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
এএসএস/এনএফ