পড়ে থাকা স্মৃতিচিহ্নই বলে দেয় আগুনের ভয়াবহতা

Shamim Hossain Majumder

২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০৬ এএম


পড়ে থাকা স্মৃতিচিহ্নই বলে দেয় আগুনের ভয়াবহতা

প্রিয়জনের কাছে যাবে বলে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে এমভি অভিযান-১০ এ করে রওনা করেছিল স্বজন। সকালে প্রিয়জনের মুখ দেখবে বলে রাতে লঞ্চে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল। কে জানতো ভোরের আলো আর দেখা হবে না তাদের। মধ্যরাতেই এমন ভয়াবহতা শিকার হতে হবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাঝনদীতে পুড়ে ছাই হতে হলো অনেকগুলো তাজা প্রাণ।

আগুনের সূত্রপাত কীভাবে, সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলের কাছাকাছি এসে (রাত তিনটার দিকে) লঞ্চে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গ্যাস এবং বাতাসের কারণে আগুনের ভয়াবহতা বেড়েছে কয়েকগুন। ঘটনাস্থলে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও বলছেন, বাতাসের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। যতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।

সরেজমিন চিত্র দেখা যায়, ওই লঞ্চটির এমন কোনো অংশ নেই যেখানে আগুনের ভয়াবহতা পৌঁছেনি। কেবিনে থাকা যাত্রীরা সেখানেই পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন। ঘুমের মধ্যেই তাদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহতা। পুড়ে কয়লা হতে হলো তাদের। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে শুধু দুজনের মাথার খুলি এবং শরীরের হাঁড়-গোড় পড়ে আছে। সদ্য জীবন্ত জ্বলে অঙ্গার হওয়া দুই প্রাণ।

চলতি বছরের মাঝামাঝিতে চালু হওয়া ঢাকা-বরগুনা নৌ রুটের এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ধারণ ক্ষমতা সঠিক তথ্য জানা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, লঞ্চটিতে ৫ শতাধিক যাত্রী ছিল। যেহেতু সপ্তাহের শেষ দিন ছিল তাই এ রুটে যাত্রীর চাপও ছিল। আগুন লাগার ঘটনা আঁচ করতে পেরে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে জীবন বাঁচাতে সুগন্ধা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। এর মধ্যে শতাধিক নারী-পুরুষ দগ্ধ হয়ে বরিশাল, ঝালকাঠিসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (সকাল পৌনে ১০টা) ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসসহ স্থানীয় প্রশাসন। এখন পর্যন্ত মরদেহগুলোর নামপরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, কয়েকটি মরদেহ ছাড়া অধিকাংশেরই ডিএনএ টেস্ট ছাড়া পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নদী তীরে স্বজনরা ভিড় করছেন। এই ভিড় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হচ্ছে। বাড়ছে নদীর তীরে স্বজনদের আহাজারি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই জানেন না তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে।

এসএম

টাইমলাইন

Link copied