একযুগে জিডিপির আকার বেড়েছে তিন গুণের বেশি : অর্থমন্ত্রী

২০০৮ সালে দেশের জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্বাধীনতার পর ৩৮ বছর লেগেছিল বাংলাদেশের জিডিপির আকার ১০০ বিলিয়ন করতে। কিন্তু আমাদের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১২ বছরে তা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী এসব কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চরে (সিইবিআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সালে ২৮তম এবং ২০৩৫ সালে ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে এবং তখন দেশের জিডিপির আকার হবে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার।
মন্ত্রী বলেন, গত শতাব্দীর ৩০ এর দশকে মহামন্দায় বড় বড় অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলো বিপাকে পড়েছিল। দশক জুড়ে চলে মহামন্দা। ৯০ এর দশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিতেও দুর্যোগ আসে। আর ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাত থেকে শুরু হওয়া মন্দা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু করোনার মতো এমন সার্বজনীন মন্দা বিশ্ব আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। এ অর্থনৈতিক মন্দাকে এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিসের চেয়েও বড় এবং ত্রিশের দশকের মহামন্দার পরে সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯-এর সঙ্কটময় পরিস্থিতির ভয়াবহতা শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির জন্য একের পর এক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার মোট ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ জাতিকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যার বাস্তবায়নও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপের ফলে করোনার প্রাথমিক অভিঘাত পার করে বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছে। করোনা মহামারি দুর্গতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথাই শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সংসদে অর্থমন্ত্রী জানান, ব্লুমবার্গ প্রকাশিত ‘করোনা সহনশীল’ দেশের আন্তর্জাতিক র্যাংকিং অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২০ নম্বরে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক, অক্টোবর ২০২০ অনুযায়ী, ২০২০ সালে মাত্র ২২টি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হবে। এ তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে একটি। করোনার সময়ে সারাবিশ্বে পুজিবাজারের পতন ঘটে। কিন্তু আমাদের সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে পুজিবাজারের মূল্যসূচক বেড়েছে ২৭ শতাংশ। আমাদের অর্থনীতির আরেকটি চালিকা শক্তি আমাদের প্রবাস আয়। করোনা আক্রান্ত সময়েও আমাদের প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৩ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জিডিপিতে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫.৬ শতাংশ, বিগত ৫ বছরের গড় ছিল ৭.৪ শতাংশ। করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা বেড়ে ৮.১৫ শতাংশ হয়েছিল। ইউরোপের প্রখ্যাত অর্থনৈতিক বিশ্লেষক স্পেক্টর ইনডেক্স অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশ ১৮৮ শতাংশ জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে সারাবিশ্বে সবার ওপরে ছিল। একইভাবে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৬৮৬ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৬৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও চীনের সঙ্গে ১ম স্থানে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে অর্জনগুলো হচ্ছে-
১. পণ্য রপ্তানি আয় ছিল ১৪.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তিন গুণ বেড়ে ৪০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২. প্রবাস আয় ছিল ৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছর দ্বি-গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু ২০২০ সালেই প্রবাস আয় এসেছে ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
৩. ২০০৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বর্তমানে সাত গুণ বেড়ে ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
৪. ২০০৮ সালে পুঁজি বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ছিল ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা, যা এখন সাড়ে চার গুণ বেড়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২৮ কোটি টাকা, এখন তা ৬৪৮ কোটি টাকা হয়েছে।
৫. চাল উৎপাদন ২ কোটি ৮৯ লাখ মে. টন, থেকে ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ মে. টন। চাল উৎপাদনে বিশ্বে এখন আমরা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছি। আমাদের সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন কৃষির বহুমুখীকরণ এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন।
৬. বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, বর্তমানে এর পরিমাণ চার গুণ বেড়ে ২১ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ, তা এখন দ্বি-গুণ বেড়ে ৯৯ শতাংশ।
৭. জেট্রোর তথ্যানুযায়ী, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৭০। ২০২০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১৫।
৮. ২০১৮ সালের ১২ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের হয়েছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ব্যবহার শুরুর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
এসআর/এসএম