পানামনগর সংস্কারে সমীক্ষার উদ্যোগ

ইতিহাসের সাক্ষী নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে অবস্থিত পানামনগর শহর। বাংলার বার ভূঁইয়া ও স্বাধীন রাজা ঈসা খাঁর স্মৃতিজড়িত প্রাচীনতম এই শহরের ভবনগুলো কয়েকশ বছরের পুরনো। বর্তমান সময়ের সাথে এই শহরকে আধুনিকায়নের ছোঁয়া দিতে এবং পর্যটকদের কাছে শহরটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এর সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে একটি বড় প্রকল্পও নেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বড় প্রকল্প নেওয়ার আগে ‘নারায়ণগঞ্জ জেলার পানামনগর প্রস্থানের সংস্কার-সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নের জন্য সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সম্প্রতি এ প্রকল্পটির ওপর বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (ডিপিইসি) সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, পানামনগরী কয়েকশ বছরের পুরনো হওয়ায় এই শহর বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলে। নগরীতে সেই সময়ে গড়ে ওঠা দালানগুলো এখন জরাজীর্ণ। অনেকগুলো দালান পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পর্যটক আকর্ষণে দালানগুলোর সুরক্ষা ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিপিইসি সভায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. শামীম খান বলেন, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে পানামনগর প্রসস্থানের। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরাকীর্তিগুলোর সংস্কার সংরক্ষণের লক্ষে প্রকল্পের উপাদান নির্বাচন, খাতভিত্তিক অর্থের পরিমাণ, ব্যয় প্রাক্কলন, নকশা অংকন ও থ্রিডিসহ বিস্তারিত ডকুমেন্টেশন, দরপত্র প্রভৃতির বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে।
তিনি বলেন, পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য সংস্কার-সংরক্ষণ ও উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করার পাশাপাশি পানামনগর প্রত্নস্থানের কাজ করা হবে। এছাড়া পুরার্কীতিগুলোর নিরাপত্তা কাঠামো প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পের প্রস্তাবিত মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্পের মূল কাজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে পানামনগর প্রত্নস্থানের পুরাকীর্তিগুলোর সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে একটি সার্বিক রূপরেখা তৈরি করা হবে।
মো. শামীম খান বলেন, প্রকল্পের আওতায় ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। সমীক্ষা কার্যক্রমের জন্য ব্যক্তি পরামর্শক উপযুক্ত নয়, এর জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা জরুরি। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন পেশ করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ব্যক্তি পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠান/বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সচিব।
পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য সংস্কার-সংরক্ষণ ও উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করার পাশাপাশি পানামনগর প্রত্নস্থানের কাজ করা হবে। এছাড়া পুরার্কীতিগুলোর নিরাপত্তা কাঠামো প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. শামীম খান
যুগ্মসচিব আরও জানান, এ সমীক্ষা প্রকল্পে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বে জনবল নিয়োগ করার সুযোগ নেই। এখানে আইএমইডি থেকে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন কমিটিতে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের রাখা উচিত।
সচিব মো. বদরুল আরেফীন বলেন, পর্যটকদের জন্য পানামনগর আরও আকর্ষণীয় করতে সরকার থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নগরের আধুনিকায়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে বিশেষজ্ঞ এনে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়াও হয়েছিল। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। এরপরই প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে এখন দেশীয় বিশেষজ্ঞ দিয়ে এ নগরীর কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এখন কাজ করা হচ্ছে। সবশেষে বলতে পারি, সংস্কারের মাধ্যমে এ নগরীকে সময়পযোগী একটি পর্যটন কেন্দ্র করার কাজে এগিয়ে যাচ্ছি।
এসআর/এনএফ
