টিকা নিবন্ধনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহযোগিতা

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে যারা অনলাইনে টিকা নিবন্ধন করতে অপারগ, তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা করা হবে। সহায়তা করবেন ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যসেবা সহকারী কর্মীরা।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক, সিভিল সার্জন বা তত্ত্বাবধায়ক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোডিড-১৯ টিকা পাওয়ার জন্য প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের মাধ্যমে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রেরণ করা হলেও সেগুলো শুধুমাত্র অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
• স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তুতি সম্পন্ন
• সহায়তা করবেন স্বাস্থ্যসেবা সহকারীরা
• ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগসহ টিকাকেন্দ্রে নিবন্ধন বুথ
• কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালেও করা যাবে নিবন্ধন
• টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মস্থল ত্যাগ নয়
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রত্যেক টিকা কেন্দ্রে একটি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি নিবন্ধন বুথ প্রস্তুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত কাজে সহযোগিতার জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারাদেশে টিকা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আমরা বিভাগীয় পরিচালক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক, সিভিল সার্জন, তত্ত্বাবধায়ক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি।’
সিএইচসিপিগণ ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার মাধ্যমে নিবন্ধনে সহযোগিতা করবেন।
এমআইএস লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান
তিনি বলেন, ‘৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা নিবন্ধন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকার প্রয়োজন নেই। ৫৫ বছরের কম বয়সী যারা অগ্রাধিকার তালিকায় আছেন কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের মেইলে ([email protected]) জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাঠাতে হবে।’
বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে সিএইচসিপিগণ ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার মাধ্যমে নিবন্ধন সংক্রান্তে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। সিভিল সার্জনদের বলা হয়েছে, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন সংক্রান্ত কাজে সার্বিক সহযোগিতা করবেন। এক্ষেত্রে তারা এমআইএস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ট্যাব ও ইন্টারনেট সংযোগের সিম ব্যবহার করবেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম শাখার ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি) ডা. মো. মারুফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পর্যায়ে যেসব স্বাস্থ্যসেবা সহকারী আছেন তাদের একেকটা ইউনিয়ন ভাগ করে দেওয়া আছে। তারা ওইসব এলাকার মানুষদের চেনেন। ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে সরকারিভাবে ট্যাব দেওয়া আছে। ওগুলো দিয়ে তারা যখন বাড়ি বাড়ি যান, তখন তারা যেন নিবন্ধন করতে সাহায্য করেন তা বলে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনে অপারগ বয়স্ক যারা আছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের নিবন্ধনে সহায়তা করা ছাড়াও কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালে নিবন্ধন করার সুযোগ থাকবে। ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়েও যে কেউ নিবন্ধন করতে পারবেন।’
কবে থেকে শুরু?
‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে’ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাদের সবাইকেই নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর বাকি যারা আছেন, আশা করছি তারা আজ-কালের মধ্যেই শুরু করে দিবেন।’
ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যসহকারীগণ নিবন্ধন কাজে সহযোগিতার বিষয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসহকারীদের নির্দেশনা দিয়েছি, তাদের কাছে যদি কেউ সহযোগিতা চায়, আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা স্বাস্থ্য সহকারী আছেন, তারা এমনিতেই গ্রামে গিয়ে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের কাজই বিভিন্ন জায়গায় উঠান বৈঠক করা। স্থানীয় কমিউনিটিতে নানা বিষয় নিয়ে মিটিং করা। ওনারা সবসময় ফিল্ডেই থাকেন। ওই সময়ে যদি কেউ সহযোগিতা চায়, তাহলে তারা সহযোগিতা করবেন।’
ইতোমধ্যে আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান
কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা পেয়েছি, সিএইচসিপি এবং স্বাস্থ্য সহকারীগণ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহযোগিতা করবেন। আমরাও স্বাস্থ্য সহকারীদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে আমরা এখন ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে করছি না, আমরা উপজেলা পর্যায়ে কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিবন্ধন কাজে সহযোগিতায় স্বাস্থ্য সহকারীরা ছাড়াও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এবং উপজেলায় আইসিটি ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামাররা কাজ শুরু করেছেন। সিএইচসিপিগণদের কাছে ল্যাপটপ এবং স্বাস্থ্যসহকারীদের কাছে ট্যাব আছে। আশা করি খুব সুন্দরভাবেই আমরা এ কাজ করতে পারব।’
৫৫ বছরের নিচে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন নয়
‘৫৫ বছরের নিচে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন নয়’ বলে জানিয়েছেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, সম্মুখযোদ্ধারা ছাড়া ৫৫ বছরের নিচে কোনো মানুষ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। তবে ৫৫ বছরের নিচে সম্মুখযোদ্ধাদের তথ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে আইসিটি মন্ত্রণালয় তাদের রেজিস্ট্রেশন আগেই সম্পন্ন করে রাখবে বলেও জানান তিনি।
সম্মুখযোদ্ধাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিদের কেন্দ্রীয়ভাবে তালিকা না পাঠানো হলে স্ব-স্ব জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে তালিকা দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
১০ ফেব্রুয়ারির আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থল ত্যাগ নয়
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসক-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসক-নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মস্থল ত্যাগ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে যে কেউ ছুটি নিতে পারবেন।’
শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন টিকা কার্যক্রম।
ডা. খুরশীদ আলম
ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার টিকা কর্মসূচি বন্ধ থাকবে। এছাড়া বাকি দিনগুলোতে টিকা কার্যক্রম চলবে।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রস্তুত আছেন। এখন পর্যন্ত বিশ হাজারের বেশি মানুষ টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন। যারা অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারবেন না তাদের সহায়তা করবেন মাঠ স্বাস্থ্যকর্মীরা।’
টিআই/এইচকে
