টিকা নেওয়ার প্রস্তুতি
১
প্রথমেই ধন্যবাদ, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে টিকাদান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য। বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় এই পদক্ষেপ একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকাটি অক্সফোর্ড আস্ট্রাজেনিকা বা কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নামে পরিচিত, এই টিকাটি অত্যন্ত নিরাপদ বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। টিকাটি যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রস্তুতকৃত টিকা নিরাপদ ভাবে এর আগেও বিভিন্ন ইপিআই বা দেশব্যাপী অন্যান্য টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার ডোজ সংখ্যা সর্বমোট দুইটি। প্রথম টিকা নেবার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয়বার টিকা নিতে হবে। ডোজ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলে তা টিভি বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অথবা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। টিকা গ্রহণের জন্য প্রতিবারই সঠিক সময়ে shurokkha.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। টিকা গ্রহণের দিনে QR কোড যুক্ত ভ্যাক্সিনেশন কার্ড এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সাথে আনতে হবে।
শারীরিক সমস্যা থাকলে, টিকা গ্রহণের আগেই তা চিকিৎসককে জানানো উচিত। কোনো অবস্থাতাতেই জ্বর নিয়ে টিকা নেওয়া উচিত না। টিকা গ্রহণের দিন সহজেই হাত উন্মুক্ত করা যায় এমন জামা পরিধান করবেন।
আপনার টিকাদান প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে, এই দুইটি অত্যাবশ্যকীয় কাগজ সাথেই রাখুন। কেউ কেউ নতুন এনআইডি কার্ডে রেজিস্ট্রেশন করতে সমস্যা বোধ করছেন, তারা পুরানো এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করবেন। তবে দেশের সকল জনগণের কথা মাথায় রেখে সামনে স্পট রেজিস্ট্রেশন করার ব্যবস্থা আরো সহজ করা হবে।
২
শারীরিক সমস্যা থাকলে, টিকা গ্রহণের আগেই তা চিকিৎসককে জানানো উচিত। কোনো অবস্থাতাতেই জ্বর নিয়ে টিকা নেওয়া উচিত না। টিকা গ্রহণের দিন সহজেই হাত উন্মুক্ত করা যায় এমন জামা পরিধান করবেন। টিকা গ্রহণ করেতে এসে অবশ্যই আপনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন, অর্থাৎ একে অপর থেকে ৬ ফিট দূরত্বে অবস্থান করবেন। হাসপাতালে অবস্থানকালীন সর্বদাই মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং হাত স্যানিটাইজ করবেন। হাসপাতাল থেকে বাসায় গিয়ে জামা কাপড় ধুয়ে ফেলবেন।
মনে রাখবেন, টিকাটি দেহে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে সময় নিয়ে থাকে তাই টিকা গ্রহণের পরও আপনাকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। টিকাটি আপনার দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সময় নেয়, তাই টিকা গ্রহণের পরেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু ভ্যাক্সিন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর কাজ করে, তাই এই ভ্যাক্সিনকে কাজ করার সময় দিতে হবে। এই সতর্কতা দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকা নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ ইপিআই প্রোগ্রামের কারণে অনেক আগে থেকে ভ্যাক্সিন প্রদানে সক্ষমতা অর্জন করেছে, তাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন দেয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সফলভাবে সম্পন্ন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যবহৃত অক্সফোর্ড এস্ট্রাজেনিকা বা কোভিশিল্ড টিকাটি অত্যন্ত নিরাপদ বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। টিকা গ্রহণের পর, এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও অত্যন্ত কম। এ পর্যন্ত যে সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে তার মধ্যে হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা, বমিভাব বা সামান্য ক্ষুধামন্দা উল্লেখযোগ্য। তাই টিকা গ্রহণের পর কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনাদের সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে টিকা দেবার পয়েন্টগুলোতে টিকা গ্রহণকারীদের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি স্বাস্থ্য কর্নার।
৩
টিকা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে বা যেকোনো ধরনের তথ্য জানতে হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ফেসবুকের অনির্ভরশীল পেজ বা অন্যান্য নামসর্বস্ব অনলাইন পত্রিকায় ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হবেন না। বাংলাদেশ ইপিআই প্রোগ্রামের কারণে অনেক আগে থেকে ভ্যাক্সিন প্রদানে সক্ষমতা অর্জন করেছে, তাই কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন দেয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সফলভাবে সম্পন্ন করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টিকাদান প্রক্রিয়ায় সফলভাবে অংশগ্রহণ করে, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এই অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আর একটি মৃত্যুও কোভিডে না হোক, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
ডা. মারুফ হাসান ।। চিকিৎসক এবং গবেষক, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল