আইওটি : জীবনযাপন কীভাবে উন্নত করছে?
ইন্টারনেট অব থিংস (Internet of things), যা আইওটি নামে সমধিক পরিচিত। এই বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে প্রযুক্তি জগতে কথোপকথনের অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে এটি ডিজিটাল এই সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই অসাধারণ ধারণা আমাদের স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে কার্যত সবক্ষেত্রে সংযুক্ত করেছে।
ভার্চুয়াল যুগে ভৌত জগতকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার সাথে সাথে, ইন্টারনেট অব থিংস নতুন সুযোগ আগের চেয়ে করেছে আরও সহজ, বিশ্বকে নতুন করে উদ্ভাবন করছে, যা আমরা আগে কল্পনাও করতে পারিনি।
একটি আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংস ইকোসিস্টেমে ‘থিংস’-এর একটি নেটওয়ার্ক জড়িত-বুদ্ধিমান সেন্সর, ইন-বিল্ট সফটওয়্যার এবং অন্যান্য সমন্বিত প্রযুক্তির সঙ্গে এম্বেড করা হয় নানা ধরনের স্মার্ট ডিভাইস।
এই ওয়েব-সক্ষম স্মার্ট ডিভাইস নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং তথ্য বিনিময় করে; কারণ তাদের সেন্সর তাদের রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহ করার কাজ করে থাকে।
এই সময়ে এসে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি থেকে শুরু করে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, স্মার্ট কার্ড, স্মার্টফোন আর স্মার্ট হোম, আমাদের চারপাশে সবই ইন্টারনেট অব থিংস।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আইওটি-সক্ষম স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহারের অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। আইওটিতে এমন সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তার ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের কাজকর্ম যেমন সহজ করেছে, তেমনি বাঁচিয়ে দিয়েছে সময়। উপরন্তু, আইওটি দৈনন্দিন কাজের স্বয়ংক্রিয়তা কাজে লাগায় এবং এর ফলে কাজের সফলতাও নিশ্চিত ও নিরীক্ষণ করে।
আইওটি এবং এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)-এর উদ্ভাবনগুলো স্মার্ট হোম ডিভাইসকে আরও উন্নত করার জন্য ক্রমাগত কাজ করছে।
এই সময়ে এসে দুই প্রযুক্তির সম্ভাবনা অন্তহীন। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা কখনই সহজ ছিল না। আপনার প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকা আপনার স্মৃতি একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে আইওটি এখন নানা ধরনের সহজ সব অবকাঠামো তৈরি করেছে।
আপনি যখন ইন্টারনেট অব থিংস সম্পর্কে চিন্তা করেন, তখন আপনি স্মার্ট ডিভাইস সম্পর্কেও চিন্তা করেন, যা আপনাকে সহজেই আপনার ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। কিছু আইওটি ডিভাইসের ভয়েস কমান্ডের ক্ষমতা রয়েছে।
আমরা অনেক সময় অন্য কোনো কাজে জড়িত থাকি, কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের আরও কাজ করতে হয়, সেজন্য আপনি চাইলে আইওটির মাধ্যমে টাইমার দিয়ে রাখতে পারেন।
আমরা আমাদের প্রিয় খাবার রান্না করতে পারি, আমাদের প্রিয় সংগীত শুনতে পারি বা সর্বশেষ ক্রিকেট আপডেট পেতে পারি, এর জন্য আমাদের হাতেও এখন কাজ করতে হয় না বা কোনো রিমোটের মাধ্যমে তা করতে হচ্ছে না। আসলে একটু কল্পনা করুন, আপনি আইওটি প্রযুক্তির কত সুবিধা নিতে পারছেন।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির বর্তমান সময়ে এসে আমরা একটি বিষয় নিশ্চিত যে, মানুষ তার জীবনকে আরও সহজ করে দেখতে চায়। সেজন্য পৃথিবীতে এখন স্মার্টহোমের চাহিদা বেড়েছে।
আমরাও সেই সুবিধা নিতে শুরু করেছি, বাড়িকে করে তুলছি স্মার্টহোম। স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ, স্মার্ট পরিধানযোগ্য ডিভাইস একটি ট্যাপেই আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে দিচ্ছে।
আইওটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখতে দিচ্ছে আগের চেয়ে আরও বেশি করে। কারণ আমাদের ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যের সব ডেটা একস্থানে জমা হয়।
আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার সাথে সাথে, আমাদের খাদ্যগ্রহণের যে নিয়ম সেটিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। এই আইওটির মাধ্যমেই আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম করে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহের সঙ্গে পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ডিভাইসগুলো আমাদের কার্যকলাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এছাড়া পরিধানযোগ্য ডিভাইসগুলোর সঙ্গে একসাথে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা বিভিন্ন ফিটনেস অ্যাপ্লিকেশন এখন মানুষকে নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও সচেতন করে তুলেছে।
ফলে ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণের মধ্যে অত্যাবশ্যক অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া আগের চেয়ে সহজ হয়ে উঠেছে। অতএব, ব্যবহারকারীরা আইওটি-সক্ষম ডিভাইসগুলো তাদের নিয়মিত জীবনের একটি অংশ হওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।
আইওটি-সক্ষম ডিভাইস সাধারণভাবে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা আরও উন্নত করেছে। হোম সিকিউরিটি সিস্টেমে বিল্ট-ইন সেন্সরগুলো ব্যবহারকারীদের সর্বদা নিরাপদ বোধ করার অনুমতি দেয়।
তারা সহজেই তাদের সব যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কারণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলো আরও জোরদার করে তুলে। এর সামান্য পরিবর্তনও ব্যবহারকারী শনাক্ত করতে পারে, ফলে একটি সর্বোত্তম পরিবেশ পান তারা।
আমরা এখন যা কিছু দেখছি, তার অধিকাংশই আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংস। ডিজিটাল সময়ে এসে মানুষের জীবনকে সম্ভাব্য সব দিক থেকেই এটি সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
সর্বোপরি, এখন প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপযুক্ত সময়, কারণ আইওটি-সক্ষম ডিভাইস এই মুহূর্তে ভার্চুয়াল জগতে রাজত্ব করে চলেছে।
জিয়াউদ্দিন চৌধুরী ।। কান্ট্রি ম্যানেজার, শাওমি বাংলাদেশ