অভ্যাস পরিবর্তন করে ডে লাইটকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশে সব সময় বিরাজ করবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা শুধুমাত্র সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে হয়ে থাকবে সেটাও ভাবার কোনো কারণ নেই।
করোনা মহামারির মতো বিশ্বব্যাপী অনিশ্চিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে কেউ হয়তো কোনোভাবে কল্পনাও করেনি। মহামারির প্রভাব শেষ হওয়ার পূর্বেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোল। সারা বিশ্ব অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে।
বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বহু দেশ আজ চরম অর্থনৈতিক সংকটে আবির্ভূত হয়েছে।
বাংলাদেশও আজ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সহজ সূচকগুলোকে সহজভাবে দেখতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে যখন খরচ কমানোর পরামর্শ দেন, তখন আপনাকে ভাবতেই হবে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে, আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আরও পড়ুন : অতিমারির ধাক্কাই কাটল না, এর ওপর ইউক্রেন যুদ্ধ, কী হবে আমাদের?
আমরা এখন সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার কথা বলছি। গাড়ি কম ব্যবহার করার কথা বলছি। অফিস সময়সূচি কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছি। অফিস আদালত, বাসাবাড়িতে এসি ব্যবহার রোধ করার কথা বলছি। রাত ৮টায় মার্কেট বন্ধ রাখার কথা বলছি। আরো অনেক কিছু যা খরচ কমানোর টোটকা হিসেবে দেখছে সবাই।
বিশ্বময় জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশেও জ্বালানি খরচ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমানো যায়। কিন্তু অফিস সময় কমালে কর্মঘণ্টার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তা না করে ডে-লাইটের ব্যবহার বৃদ্ধি করলে অনেক বেশি সাশ্রয় হওয়া সম্ভব।
মার্কেট কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের সময় সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে দিনের আলোয় করার অভ্যাস করলে বিদ্যুৎ ব্যবহার যেমন কম হবে, তেমনি ব্যবসায়িক কর্মঘণ্টা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
ব্যবসা-বাণিজ্য সকাল ১০টায় শুরু না করে সকাল ৮টায় শুরু করুন। আর সময় দু’ঘণ্টা এগিয়ে এনে ৬টায় শেষ করুন। এতে কর্মঘণ্টার কোনো ক্ষতি হবে না, শুধুমাত্র অভ্যাসটা পরিবর্তন করুন। অফিস সময় না কমিয়ে অফিস সময় পরিবর্তন করুন, যাতে কাজের গতিশীলতা বজায় থাকে।
অফিস শুরুর সময় ৯টার পরিবর্তে ৭টায় করুন, বিকেল ৩টায় শেষ করুন। তাতে কর্মঘণ্টার কোনো ক্ষতি হবে না। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। প্রাইভেট সেক্টরে বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে সকাল ৮টায় শুরু হয়। সময়টা শুধু অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। মনিটরিংটা শুধু সরকারকে করতে হবে।
আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কা সমাচার : সংকট যতটা অর্থনৈতিক, ততটাই সামাজিক ও রাজনৈতিক
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী-ছাত্রীদের ক্লাস সকাল ৭টায় শুরু হলে ‘আরলি টু বেড, আরলি টু রাইজ’ অভ্যাসটা পুনরায় শুরু করা সম্ভব। যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আবাসনে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রিক সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হবে। শুধুমাত্র পরিবর্তন দরকার অভ্যাসের।
গণপরিবহন ব্যতীত অন্যান্য গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ওপর একটি সিদ্ধান্ত চালু করলে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে ট্রাফিক জ্যামের কারণে যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে। জ্বালানি সাশ্রয় হবে, ট্রাফিক জ্যাম পরিহার করা সম্ভব হবে।
সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে শুক্রবার জোড়-বিজোড় সব রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। তিনদিন জোড় সংখ্যার নম্বর আর তিনদিন বিজোড় সংখ্যার নম্বর চলাচল করলে, সারা দেশের জ্বালানি খরচ অনেকটা কমে আসবে। ট্রাফিক জ্যাম কমে আসবে সহনশীল পর্যায়ে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৈশ্বিক বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে কমে যাচ্ছে। আমদানি ব্যয় মেটানোর ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কিংবা ভবিষ্যৎ আমদানি হুমকির মুখে। রপ্তানির ওপর জোড় দেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। গার্মেন্টস ছাড়াও রপ্তানির বিভিন্ন খাত বৃদ্ধি না করলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কার নিরুদ্দেশ যাত্রা
আমদানি পণ্যগুলোর ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা সময়ের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমানোর কোনো বিকল্প নাই। সারাবিশ্বে প্রায় ১০ মিলিয়নের অধিক প্রবাসী আছেন। হুন্ডি নয় সঠিক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে উৎসাহিত করতে হবে।
দেশীয় পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করে, দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে, রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করে, দেশের বাজার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। কর্মঘণ্টা না কমিয়ে বরং অভ্যাস পরিবর্তন করে পর্যাপ্ত দিনের আলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
লেখক : মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স