করোনাকালীন সময়ে ইউএস-বাংলার পথচলা!
করোনাকালীন সময়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কতটা মানবিক আর সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান তা নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হতে থাকে তখন থেকেই সারা বিশ্বের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির ন্যায় বাংলাদেশের এভিয়েশনেও প্রভাব পড়তে থাকে। চীনের উহান থেকে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি এবং পরবর্তী সময়ে সারাবিশ্বে মহামারিতে রূপ ধারণ করে যা এখনো চলমান।
বাংলাদেশের একমাত্র ক্যারিয়ার হিসেবে ইউএস-বাংলা চীনের গুয়াংজুতে সপ্তাহের প্রতিদিন বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছিল। করোনার বিস্তৃতি লাভের পর একর পর এক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল তখনও চীনের গুয়াংজুতে স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে ইউএস-বাংলা।
বিশ্বব্যাপী যখন করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত চিকিৎসাব্যবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। যখন কোথাও আশানুরূপ চিকিৎসা সামগ্রী ছিল না বললেই চলে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশ থেকেও আমদানি করাও যাচ্ছিল না, ঠিক তখনই চীন থেকে স্বাস্থ্যসেবাকে চলমান রাখার জন্য অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফেসশিল্ড, করোনা টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস এর জন্য উপকরণের কাঁচামাল বিনা খরচে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাজার হাজার চিকিৎসা সামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী যখন করোনার আক্রমণে বিপর্যস্ত চিকিৎসাব্যবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।
সারাদেশ যখন কার্যত লকডাউন অবস্থায় ছিল, দেশের আকাশপথও অবরুদ্ধ তখনো দেশের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স গত বছর রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় দশ হাজার মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়ে সহায়তা দিয়েছে।
সারাদেশে করোনা শনাক্তকরণ যখন দুঃসাধ্য ছিল তখন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ সকল শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে করোনা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রয়োজনে সকল শ্রেণির কর্মচারীদের পরিবারবর্গেরও কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াসহ চিকিৎসা সহায়তাও দিয়েছে। সারাবিশ্ব যখন অবরুদ্ধ তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের গুয়াংজু রুটের যাত্রীদের বিনামূল্যে করোনা শনাক্ত করার ব্যবস্থা করেছে।
করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে বাংলাদেশি নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দেশীয় পর্যটকরা, বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা কিংবা চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। তখনও ব্যবসাকে প্রাধান্য না দিয়ে সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে মানবিকতা দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের সহায়তায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে ইউএস-বাংলা। এয়ারলাইন্স এর কর্মীরা ফ্রন্টলাইনারের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে দুবাই, আবুধাবি, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হ্যানয় এমনকি ফ্রান্সের প্যারিসেও বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
যাত্রী পরিবহন যখন বন্ধ, কার্গো পরিবহনও তখন অনেকটা বেসামাল অবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সরকারের অনুমতি নিয়ে প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফটগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো এয়ারক্রাফটে রূপান্তর করে বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট হিসেবে পরিচালনা করে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতেও ভূমিকা পালন করেছে। কার্গো ফ্লাইট হিসেবে কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন দেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে- তাদের মরদেহ বহন করার জন্যও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা। চার ঘণ্টার নোটিশে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-১৮ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মরদেহও থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন দেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে- তাদের মরদেহ বহন করার জন্যও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা।
সারা বিশ্বের বিখ্যাত সব এয়ারলাইন্স যেমন এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ করোনাকালীন সময়ে স্বল্প সময়ের নোটিশে হাজার হাজার কর্মচারী, কর্মকর্তা, পাইলট, কেবিন ক্রু বাধ্যতামূলক ছুটিতে কিংবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ গত বছর করোনার শুরুতে সব ধরনের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ ঘোষণা দিয়ে কর্মচারীদের বিনা বেতনে ছুটি দিয়েছে। সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্মচারী ছাঁটাই প্রক্রিয়াতে না গিয়ে সকল কর্মচারীদের রেখে দেওয়ার মানসিকতা দেখিয়েছিল, করোনাকালীন সময়ে কর্পোরেট জগতে মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
করোনার প্রথম ধাপে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যখন প্রায় দু’মাস পর স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে নানা বিধিনিষেধ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে, তখনও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতি জেনেও নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। শুধু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নয় বাংলাদেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। যাত্রীদেরকে এভিয়েশনমুখী করার জন্য অভ্যন্তরীণ সকল রুটে মাত্র ২০০০ টাকা ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এখানে ব্যবসা নয় সেবাকেই প্রাধান্য দিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
একটি দেশের আকাশপথ সচল থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ত্বরান্বিত হবে—এটা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু বিশ্বাস করে না, আকাশপথ সচল রাখার জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকাও রাখছে। এয়ারলাইন্স শুধু একটি ব্যবসা নয়, এটা একটি সেবার দৃষ্টান্তও তা পরতে পরতে মেনে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশের মানুষের আস্থা আর ভালোবাসায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একটি শক্ত ভিত তৈরি করার প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেছে। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে, বাংলাদেশি জনগণ ও তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থার প্রতীক হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স