পুলিশ কর্মকর্তার আত্মহনন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

পুলিশ কর্মকর্তা (সিনিয়র এএসপি) পলাশ সাহার আত্মহত্যার দুঃখজনক ঘটনাটি কয়েকদিন ধরে সমাজ মাধ্যমে (সোশ্যাল মিডিয়া) অনুসরণ করেছি। তার এ অকাল প্রয়াণ অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি কেবল তার নিজের বা পরিবারের ক্ষতি নয়, ক্ষতি দেশেরও। একজন নাগরিককে সাফল্যের এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে কেবল তার একক প্রচেষ্টা ছিল না, ছিল দেশের মানুষের সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা ও ত্যাগ। একজন অপার সম্ভাবনাময় তরুণের এ পরিণতি মেনে নেওয়া কষ্টকর। জানা যায়, চট্টগ্রামস্থ ৱ্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্প কার্যালয় থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহার লাশ উদ্ধার করা হয়। তার অফিস কক্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি একটি চিরকুটও পাওয়া যায়। দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তিনি আত্মহননের ঘটনা ঘটান বলে গণমাধ্যমে জানা যায়।
পলাশ সাহার পরিবারের সদস্যবৃন্দ এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে মেনে নিলেও নেটিজেনদের একটি ক্ষুদ্র অংশ তা মেনে নিতে নারাজ। তারা এতে হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন, মৃত্যুর পরও তিনি চেয়ারে যেভাবে বসেছিলেন, বিশেষত তার হাত দুটো যেভাবে কোলের উপর পড়ে ছিল, নিজের হাতে মাথায় পিস্তল চালালে হাত দুটি সে পজিশনে থাকার কথা নয়। 'তার কি তবে তিনটি হাত ছিল?' - এমন প্রশ্নও তুলেছেন তারা।
অন্যদিকে, মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দায়ী করে যে চিরকুট তিনি লিখেছেন তাতে একটি শব্দের বানান ভুল ছিল। শব্দটি হলো স্বর্ণ। পলাশ লিখেছেন: “... বউ যেন সব স্বর্ন নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ন বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।” - নেটিজেনদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ ক্যাডারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে চাকরি পাওয়া একজন মেধাবী ছাত্র 'স্বর্ণ' শব্দের বানান জানেন না, তা কি হয়?
উপরের দুটি মতবাদের কোনোটিই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রথমটির ক্ষেত্রে, আত্মহত্যা করার পর তার হাত কোন পজিশনে থাকলে তা 'আত্মহত্যা' হতো তার কোনো দিকনির্দেশনা নেই সন্দেহ পোষণকারীদের বক্তব্যে। তাছাড়া, দেশের সব বিসিএস অফিসার বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দের বানান জানবেন এমন কল্পনাও যুক্তিগ্রাহ্য নয়। বাস্তবতা হলো, সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছেন এমন অনেক লেখকের লেখালেখিতেও হরহামেশাই বানান ভুল দেখা যায়।
পলাশ সাহা যে আত্মহত্যা করেছেন তা কেবল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ নয়, তার পরিবারের সদস্যরাও মেনে নিয়েছেন। পুলিশের তদন্তেও এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। এমতাবস্থায়, সন্দেহাতীতভাবেই ধরে নেওয়া যায় সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। পরিবারের সদস্যবৃন্দ বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলেটির এ আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তার স্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে তারা অভিযোগ করেন, প্ররোচনা দিয়ে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেন তারা।
হৃদয়বিদারক এ ইচ্ছামৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা হতে পারে। তবে, এ লেখায় বৈবাহিক সম্পর্ক ও ব্যক্তিজীবনে তার প্রভাব নিয়ে স্বল্প পরিসরে কিছু চিন্তা সহভাগ করা হবে কেবল। উদ্দেশ্য, ভবিষ্যতে এমন জীবনহানি এড়াতে খানিক পথনির্দেশনা দেওয়া।
পলাশ সাহার ভাই নন্দলাল গণমাধ্যমে বলেছেন, "দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশ বিয়ে করেন। বিয়ের ছয়-সাত মাস পর থেকেই তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। সবসময় কলহ লেগেই থাকত। পলাশ তার স্ত্রী ও মাকে ভালোবাসত। ... বুধবার সকালেও পলাশ ও তার স্ত্রীর মধ্যে কলহ হয়। এ কারণেই অভিমানে পলাশ আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।”
প্রশ্ন হলো, বিয়ের পরপরই কেন পারিবারিক জীবনে ঝামেলা শুরু হলো? তা কি এড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না? - এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বাংলাদেশের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থার দিকে ফিরে তাকাতে হবে।
বাংলাদেশে বেশিরভাগ পরিবারই যৌথ পরিবার। ছেলেদের কারো না কারো সাথে বসবাস করেন তাদের বৃদ্ধ মা-বাবা। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের এ এক বড় পার্থক্য। সেসব দেশে ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে সচরাচর বাবা-মায়ের সংসার ছেড়ে যায়। ফলে, বিবাহিত সন্তানদের সাথে পিতামাতার সহাবস্থান একপ্রকার অকল্পনীয়। সেখানে বয়স্কদের জন্য পৃথক আবাসন ব্যবস্থা থাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বা সরকারের পক্ষ থেকে। জীবনধারণের জন্য পিতামাতাদের তাদের সন্তানের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় পিতামাতাকে সন্তান, বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ছেলে সন্তানদের পরিবারে বসবাস করার বিকল্প থাকে না। স্বভাবতই, পুত্রবধূর সাথে মিলেমিশে বসবাস গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বা উপাদান হয়ে দাঁড়ায় বয়সের ভারে জর্জরিত একপ্রকার অসহায় পিতামাতার জীবনে।
কানাডায় পাড়ি জমানোর আগে বাংলাদেশে অবস্থানকালে মা আমার সাথেই থাকতেন; বা বলা চলে, আমি মায়ের সাথে থাকতাম। দুই ছোটবোন, এক ভাগিনা এবং স্ত্রীসহ আমাদের সহাবস্থান ছিল শান্তিপূর্ণ ও মধুর। বলা বাহুল্য, দেশ ছাড়ার আগের প্রায় অর্ধযুগ স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে অভিন্ন আবাসস্থলে সফলভাবে বসবাস করে আমি যে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার কিছুটা এ লেখায় প্রতিফলিত হবে, যা স্বাভাবিক।
আমাদের দেশে বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সচরাচর দুই পক্ষের (বিশেষত কনের) দৈহিক সৌন্দর্য, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বংশ মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়। অপরদিকে, বর-এর আর্থিক অবস্থা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। পূর্ব পরিচিত বা পূর্ব সম্পর্কের ভিত্তিতে যেসব বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সেখানেও মোটামুটি উপরের বিষয়গুলোতেই মনোযোগ দেওয়া হয়। যে বিষয়টি বিবেচনায় বাইরে থেকে যায় তা হলো, হবু বর-কনের বিবাহোত্তর পারস্পরিক প্রত্যাশা নিয়ে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা।
আরও পড়ুন
ক্ষেত্রভেদে এ প্রত্যাশা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন, যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে হবু স্ত্রীকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া দরকার যে বরের মা তাদের পরিবারে তাদের সাথেই থাকবেন। মায়ের ব্যক্তিত্ব বা স্বভাব সম্পর্কেও একটা ধারণা দেওয়া যেতে পারে, বা তার সাথে কথা বলার সুযোগও করে দেওয়া যেতে পারে ভবিষ্যৎ স্ত্রীকে। জানতে চাওয়া যেতে পারে, মা সাথে থাকলে তাতে হবু স্ত্রী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন কিনা। উত্তর না-বোধক হলে সে ধরনের বৈবাহিক সম্পর্কে না জড়ানোই শ্রেয়।
একইভাবে, কোনো কোনো পরিবারে মা ছাড়াও অন্য কোনো নির্ভরশীল সদস্য, যেমন, ভাগিনা-ভাগিনী বা ভাতিজা-ভাতিজির দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে বরের উপর। এই বাড়তি দায়িত্ব হবু স্ত্রী শেয়ার করতে কতটা আগ্রহী তাও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে। বিস্তারিত আলাপে ঐকমত্য পোষণ সম্ভব না হলে সে ধরনের সম্পর্ক এগিয়ে না নেওয়াই সব পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক। কেবল হবু স্ত্রীর সাথে নয়, উপরের বিষয়গুলো শাশুড়ি বা মা-এর সাথেও আগেভাগে আলাপ করে নেওয়া প্রয়োজন।
মোটকথা, বিবাহ প্রক্রিয়ায় আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনার বাইরেও বর-কনের কিছু বাড়তি করণীয় বা দায়িত্ব রয়েছে যা এড়িয়ে গেলে পরে পস্তাতে হতে পারে। তাই, বৈবাহিক সম্পর্কের আগে হবু বর-কনে দুজনেরই উচিত এক বা একাধিকবার আলোচনায় বসে পরস্পরের ব্যক্তিগত ও সমন্বিত (পারিবারিক) প্রত্যাশা ও চাহিদা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা, যাতে বিবাহের পর কোনো পক্ষকেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে না হয়। পিতামাতা বা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদেরও উচিত হবু বর-কনেকে এ ধরনের আলোচনায় বসতে উৎসাহিত করা এবং আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া। এজন্য দরকার প্রয়োজনীয় সময়ের। এ সময়টা কয়েক সপ্তাহ হতে কয়েক মাসও হতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, তাড়াহুড়োর বিয়ে সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারে পরবর্তীতে যার সংশোধন অনেকটাই অসম্ভব।
কেবল বাংলাদেশ বলে কথা নয়, শাশুড়ি-পুত্রবধূর সম্পর্ক পৃথিবীর কোথাও খুব সহজ নয়। তবে, সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এ সম্পর্ক মধুর করে তোলা যায়। এতে দরকার মা এবং পুত্রবধূ দুই পক্ষেরই সদিচ্ছা। কনের মা-এর ভূমিকাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। পুত্রবধূ শাশুড়িকে নিজের মায়ের বিকল্প ভেবে সেভাবে যত্নআত্তি করে তার মন জয় করার চেষ্টা চালাতে পারেন। অপরদিকে, শাশুড়িও পুত্রবধূকে প্রতিপক্ষ না ভেবে নিজের কন্যার বিকল্প মনে করতে পারেন।
আর ওদিকে, স্বামীর সংসারে কীভাবে কন্যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে আদর্শ স্ত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সে বিষয়ে কন্যাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারেন কন্যার মা। কন্যাকে এমন কোনো পরামর্শ বা বুদ্ধি দেওয়া উচিত নয় যাতে সে তার শাশুড়ি বা শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বা অবাঞ্ছিত ভাবতে উৎসাহিত হয়। কন্যার শ্বশুরালয়ে কন্যার সাথে কারো কোনো বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলে অন্ধভাবে কন্যার পক্ষাবলম্বন না করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক পন্থায় সমস্যা নিরসনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। 'আমার মেয়ে ভুল করতেই পারে না, সব দোষ অপর পক্ষের' - এ জাতীয় চিন্তা পশ্চাৎমুখী এবং তা কন্যার ভবিষ্যতের জন্যও বিপজ্জনক। এ ধরনের মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে আপনি বরং আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন।
ভালোবাসা একপক্ষিক নয়। ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসা দিতেও হয়। মা এবং শাশুড়ির সম্পর্ক উন্নয়নে দুপক্ষেরই এগিয়ে আসতে হয়। বাঙালি পরিবারে সচরাচর বরকেই এ ধরনের ঝামেলা মোকাবিলা করে একটা ভারসাম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হয়। তাই, যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা বা বিবেচনা না থাকলে বর সমস্যার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে এক সময় মানসিক রোগীতে পরিণত হতে পারে। দুজনকেই গভীরভাবে ভালোবাসলেও মা ও স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কে ভারসাম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা পলাশ সাহা। তিনি এ সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন যে আত্মহনন সমস্যা সমাধানের গ্রহণযোগ্য বিকল্প নয়।
আপনি যদি পারিবারিক সমস্যা জর্জরিত কোনো পরিবারের ভুক্তভোগী বর হয়ে থাকেন তবে আপনার উচিত হবে যথাসম্ভব ভারসাম্যমূলক পরিবেশে বিবদমান দুপক্ষকে নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসা। প্রয়োজনে আপনার ও আপনার স্ত্রীর পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদেরও এ আলোচনায় অংশগ্রহণের আবেদন জানাতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন আলোচনায় সুফল পাওয়া যায়। এ ধরনের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ না নিয়ে যদি নিজের মাথায় সমস্যাগুলো জমাতে থাকেন, তবে তাতে আপনি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং একইসাথে, অন্য সব পক্ষকেও বিপদে ফেলবেন - পলাশ সাহা যে পথে হেঁটেছেন।
আপনি যদি কনে হয়ে থাকেন তবে আপনার উচিত হবে গোপনে আপনার স্বামীর কান ভারী না করে সমস্যাগুলো নিয়ে আপনার শাশুড়ি ও স্বামীকে একসাথে নিয়ে আলোচনা করা। নিজের আচার আচরণে সীমাবদ্ধতা বা ভুলত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করে নেবার মানসিকতাও আপনার থাকতে হবে। শাশুড়িকে মায়ের অবস্থানে কল্পনা করে তার সাথে যথাসম্ভব হৃদ্যতাপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করে তার মন জয়ের চেষ্টা চালাতে হবে। তবেই তিনি আপনি ও আপনার সন্তানদের প্রতি তার স্নেহ ভালোবাসা উজাড় করে দিতে উৎসাহিত হবেন। একে অপরের পেছনে নেতিবাচক কথা বলে কেউ কোনোদিন পারিবারিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি; এতে বরং জটিলতা বাড়ে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগও যেন তৃতীয়পক্ষকে না দেন।
আর, আপনি যদি শাশুড়ি হয়ে থাকেন তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার ঘরে আসা পুত্রবধূ আপনার কন্যার মতোই একজন। সেও তার মা-কে ছেড়ে আপনার পুত্রের কাছে এসেছে সংসার ধর্ম পালন করতে। তাকে কোনোভাবেই আপনার বাড়ির গৃহকর্মী গণ্য করে তার ওপর সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। বরং, তার হাতে হাত রেখে সৌহার্দময় পরিবেশে সাংসারিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। স্ত্রী হিসেবে আপনার পুত্রের সাথে একান্তে সময় কাটানোর এবং পারস্পরিক ভক্তি-ভালোবাসা বিনিময়ের সুযোগ তাদের দিতে হবে, যে সুযোগ আপনি নিজেও একসময় পেয়েছিলেন। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনার ছেলের আপনার প্রতি ভালোবাসা আর তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসায় মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা স্বাভাবিক। আপনাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে, পুত্রবধূ কোনোভাবেই আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী বা সমকক্ষ নয়; বরং আপনার দুঃসময়ের সহযাত্রী, বন্ধু।
বরের শাশুড়ি, অর্থাৎ পুত্রবধূর মায়েরা প্রায়শই কন্যার সংসারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে কন্যাকে ভুল পথে পরিচালিত করেন। অনেক মা চান তার কন্যা অন্যের সংসারে কর্তৃত্ব করুক এবং জামাই (কন্যার স্বামী) ব্যক্তিত্বহীন জড়বস্তুর মতো স্ত্রীর কথায় উঠবস করুক। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, অর্থাৎ তাদের সন্তানসন্ততি কাছেও একটা বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। তারাও তাদের পিতাকে একজন মেরুদণ্ড বা ব্যক্তিত্বহীন মানুষ ভাবতে শুরু করবে। আপনার কন্যা তার শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে শোনার মতো অযোগ্য কোনো অভিযোগ উত্থাপন করলে তাতে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে বরং তাকে শ্বশুরবাড়ির পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার পরামর্শ দিতে পারেন। কারণ, অতি প্রশ্রয়ে সে তার পরিবারের তুচ্ছ বিষয়েও আপনাকে জড়াতে চাইবে। এ বিবেচনায়, মেয়ের পরিবারের সাথে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলা আপনার একান্ত কর্তব্য। ভুলে যাবেন না যেন, সংসারটা আপনার নয় আপনার কন্যার।
পরিশেষে বলবো, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান করে না; বরং, সব পক্ষের জন্য পরিবেশ আরও জটিল করে তোলে। এ কারণেই আত্মহত্যাকে পাপ গণ্য করা হয়। পৃথিবীর কোনো ধর্মগ্রন্থেও আত্মহত্যাকে মহিমান্বিত করা হয়নি। পলাশ সাহা আত্মহত্যার মাধ্যমে নিজের পরকাল প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। একইসাথে, পরিবারের সবচেয়ে যোগ্য মানুষটি এভাবে চলে গিয়ে জন্মদাত্রী মা ও প্রিয়তমা স্ত্রীসহ পরিবারের সব সদস্যকে ভাসিয়েছেন শোক ও স্বজন হারানোর অতল বেদনায়।
এম এল গনি ।। কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি)
