প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর: প্রাপ্তির জায়গা কতটুকু?

বৈচিত্র্যে ভরপুর সূর্য উদয়ের দেশ জাপান। দক্ষিণ এশিয়ায়, জাপানের কৌশলগত-কূটনৈতিক এজেন্ডায় বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মুক্তবাজারের আধার। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থনীতি এবং ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় লাভজনক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষণীয়। তার ওপরে রয়েছে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের সস্তা শ্রম সরবরাহের সুনাম। তাই তো বাংলাদেশকে সবাই কাছে পেতে চাই।
সম্প্রতি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফর শেষ করেছেন। সাক্ষাৎ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে। সমঝোতা করেছেন একাধিক বিষয়ে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্বার্থে দুই দেশ বহু বিষয়ে একমত হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে কিছু গণমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার এই জাপান সফর নিয়ে প্রচারে কেমন জানি ঘাটতি লক্ষ্য করছি। যা চীন সফরে ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখন দেখার বিষয় কোন দেশ থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায়? চীন, জাপান না যুক্তরাষ্ট্র? যে কেউ বলবে জাপান আমাদের নিঃস্বার্থভাবে যে সহযোগিতা করে তা আসলে অতুলনীয়। তাদের এই সহযোগিতা পেছনে কারণ কী?
এশিয়ার মধ্যে জাপান বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। ১০ বছরে, রপ্তানির পরিসংখ্যান দ্বিগুণ হয়েছে। প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে বস্ত্র, তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য। যদিও ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য এবং খাদ্য শিল্পের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্বার্থ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের আধুনিক পর্যায়ে প্রাধান্য পেলেও এই দুই দেশের ভিত্তি কিন্তু সুদীর্ঘ সময়ের। ওইসিডি (Organisation for Economic Co-operation and Development-OECD) সদস্য দেশ জাপানই সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি অদূর ভবিষ্যতে 'ব্যাপক অংশীদারিত্ব' থেকে 'কৌশলগত অংশীদারিত্বে' উন্নীত হবে এটা কিন্তু এখনই হলফ করে বলা যায়।
বাজেট সহায়তা, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং অনুদান হিসাবে বাংলাদেশকে ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার দেবে জাপান। এর মধ্যে জাপান ৪১৮ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য উন্নয়নে ঋণ দেবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের জাপানে রপ্তানির প্রায় ৭৩ শতাংশ এলডিসি (Least developed countries-LDC) বিশেষাধিকারের কারণে শুল্কমুক্ত। জাপান বাংলাদেশের ১২তম বৃহত্তম রপ্তানি বাজার এবং আমদানির সপ্তম বৃহত্তম উৎস। যা গত অর্থবছরে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি এবং ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানিতে পৌঁছেছে। একইভাবে জাপানি বিনিয়োগ বাংলাদেশে ন্যায্য পরিবেশে ব্যবসা করতে পারা জাপানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এরই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও জাপানের ইপিএ সম্পাদনের চেষ্টা চলছে। যা সত্যিই নতুন সমীকরণ এনে দিবে অর্থনৈতিক মেরুকরণে।
এবার দেখা যাক আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাপান সফরের কিছু আলোচিত দিক।
পাঁচ বছরে এক লাখ কর্মী নেবে জাপান:
জাপান সরকার এবং ব্যবসায়ীরা সেদেশের ক্রমবর্ধমান কর্মী ঘাটতি মেটাতে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে এক লাখ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এটা ঠিক জাপানে কর্মীর সংকট অনেক। তাইতো জাপান আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেবে। এই সংখ্যা হয়তো আরও বাড়বে। যদি আমরা ঠিকমতো ভাষা প্রশিক্ষণ এবং তাদের ন্যূনতম দক্ষতা দিতে পারি।
বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ডলার দেবে জাপান:
বাজেট সহায়তা, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং অনুদান হিসাবে বাংলাদেশকে ১.০৬৩ বিলিয়ন ডলার দেবে জাপান। এর মধ্যে জাপান ৪১৮ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য উন্নয়নে ঋণ দেবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও চুক্তি:
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তিতে বাংলাদেশ ও জাপান নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। আশা করছি চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন ও হবে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক হবে। এছাড়াও জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্সের অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে পাঁচটি টহল নৌকা দ্রুত সরবরাহসহ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত হয়েছে এবারের বৈঠকে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ঋণ:
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার হলো জাপান। বাংলাদেশ ও জাপান উভয় দেশ অর্থনৈতিক সংস্কার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য উন্নয়ন নীতি ঋণের জন্য নোট বিনিময় স্বাক্ষর এবং জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন (১)-এর মধ্যে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঋণকে স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিডা) ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) সিস্টেম, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন, ব্যাটারিচালিত সাইকেলের জন্য কারখানা স্থাপন, তথ্য সুরক্ষার জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালু এবং বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বিএসইজেড) সাথে ভূমি চুক্তিসহ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। যা সুনিশ্চিত আমাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।
জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে, বিশেষ করে মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (মিডি)-সহ বঙ্গোপসাগরীয় শিল্প বৃদ্ধি বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগের আওতাধীন প্রকল্পগুলোয় বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নে অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জাপান সরকার।
কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ:
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর দক্ষ কর্মী নিয়ে থাকে জাপান। এই সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। দক্ষ মানবসম্পদসহ জনগণের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষকদের জাপানে শিক্ষার সুযোগের নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাপান।
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান:
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের প্রতি অব্যাহত মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। এছাড়াও ভাসানচরে রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য জাপানের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য জাপান সরকার ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২ মিলিয়ন জরুরি সহায়তা অনুদান দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও জাপান মনে করে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের মিয়ানমারে একটি টেকসই, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন হলো এই অঞ্চলজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান।
মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিশ্চয়তা:
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা সম্মান রেখেই জাপান বাংলাদেশে কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এই জনপদে সবার জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং ভাগ করে নেওয়া সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন।
বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সবার সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনে জাপান তাদের অভিমত তুলে ধরেন। আমরা সবাই জানি ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনের বি.আর.আই প্রজেক্টকে প্রতিহত করার একটি কৌশল। বাংলাদেশ যদি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে চীনের কি বিরাগভাজন হবে না? প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়?
জাপানের সঙ্গে ৬ সমঝোতা স্মারক সই:
বাংলাদেশ জাপানের সাথে বিভিন্ন বিষয় সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করেছে। প্রথম সমঝোতা স্মারকটি হলো জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে।
দ্বিতীয়টি হলো বিএসইজেডের জমি লিজ চুক্তির জন্য ওএনওডিএ ইনকর্পোরেটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারক হলো বিএসইজেডের জমি লিজ চুক্তির জন্য বাংলাদেশ ন্যাক্সিস কোং লিমিটেড এবং বাংলাদেশ এসইজেড লিমিটেডের সাথে।
চতুর্থ সমঝোতা স্মারকটি হলো গ্লাগিট এবং মুসাশি সেইমিৎসু ইন্ডাস্ট্রি গ্লাফিট এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ) ব্যাটারিচালিত সাইকেল এবং বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য।
পঞ্চম সমঝোতা স্মারকটিতে সাইফার কোং লিমিটেডের সাথে এবং ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারকটি হলো জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা এবং বিআইডিএ সাথে।
১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। এমনকি বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবে জাপানি শিক্ষার্থীরা তখন তাদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যা নিঃসন্দেহে চিরস্মরণীয়।
জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান উপদেষ্টাকে ডিলিট প্রদান:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়। সামাজিক উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাপানের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। যা সত্যিই সম্পর্কের নতুন উষ্ণতা সৃষ্টি করবে।
প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে আমাদের প্রাপ্তির জায়গা নেহায়েত কিন্তু কম নয়। জাপান আমাদের যেমন সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান দেয় তা বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য অদ্বিতীয়। ভূরাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আমাদের কাছে পেতে চাই কিন্তু নিজেদের স্বার্থে। জাপানের উদ্দেশ্য কিন্তু সবার থেকে আলাদা। জাপান আমাদের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায় না। হতে চায় উন্নয়নের অংশীদার। যদিও এর পিছনে রয়েছে সুনিশ্চিত কতিপয় কারণ।
বাংলাদেশ ও জাপান সম্পর্কের ঐতিহাসিক কারণ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাপানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু জাপানে সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে তার সংযোগ স্থাপনে ছিল কৌশলী। জাপান ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। মূলত তখন থেকেই দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরপরই জাপান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। এমনকি বন্ধুত্বের প্রতিদান হিসেবে জাপানি শিক্ষার্থীরা তখন তাদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যা নিঃসন্দেহে চিরস্মরণীয়। স্বাধীনতার পরবর্তী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর ধীরে ধীরে বাংলাদেশের একটি বড় দাতা দেশে পরিণত হয়েছে জাপান। স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাপান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনে কাজ করতে শুরু করে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে।
জাপান বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা করে গেছে। যার ফলে দুই দেশের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ ও বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার এবং সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস, কারণ জাপান বাংলাদেশকে ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এই সহায়তাগুলো আমাদের অর্থনীতি এবং অবকাঠামো পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।
আশা করা যায়, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্কের এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ ও জাপান আগামী বছরগুলোয় পারস্পরিক সহযোগিতায় সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অংশীদারিত্বের পদক্ষেপ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। জাপান বাংলাদেশর সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গাঢ় ও মজবুত হবে। উন্নয়নের স্বার্থে দুই দেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাবে বহুদূর এটাই প্রত্যাশা।
প্রশান্ত কুমার শীল ।। শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]
