তারুণ্যের শক্তি ও আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্ন

একটা দেশে বড় শক্তি তারুণ্য বা যুব সমাজ। এই শক্তি কাজে লাগিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস। প্রতিবারে মতো এ বছরও বিশ্বজুড়ে নানান আয়োজনে দিনটা উদযাপন করা হবে। এই উদযাপনের মূলে আছে তরুণদের অনুপ্রেরণা, সক্ষমতা ও সৃজনশীলতাকে সম্মান জানানোর এক মহৎ উদ্দেশ্য।
আজকের তরুণরা অনেক বেশি সজাগ, সৃজনশীল ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অনলাইন উদ্যোগ, ই-লার্নিং—সব ক্ষেত্রেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেদের সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।
বিবিসি এর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাঁচটি দক্ষতা অর্জনের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশের তরুণরা। সেগুলো হলো, ডিজিটাল লিটারেসি, ফ্রিল্যান্সিং, ভাষা শিক্ষা ও উদ্যোক্তা হওয়ার দক্ষতা।
আবার এই যুবকদের মধ্যেই দেখতে পাবেন এক ধরনের বিপ্লবী চেতনা। তারা অন্যায়, বৈষম্য ও পশ্চাৎপদতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেশ পরিবর্তনে তারা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, সামাজিক আন্দোলন কিংবা উদ্ভাবনী প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে আসতে চায়। ইতিহাস সাক্ষী—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তরুণ-যুবকরাই ছিল সামনের কাতারে।
এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যারা তরুণ, নবীন।
আরও পড়ুন
পৃথিবীর যেকোনো যুবক সারা বিশ্ব জয় করে ফেলার স্বপ্ন দেখে। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। অজস্র প্রমাণ আমাদের সামনেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তরুণ শিক্ষার্থীরা আজ দারুণ সাফল্য অর্জন করছে। তারা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতছে, স্টার্টআপ উদ্যোগে সফল হচ্ছে, গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে এবং শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও নেতৃত্বে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করছে।
আধুনিক অবকাঠামো, দক্ষ শিক্ষক, ইন্ডাস্ট্রি-সংযোগ ও সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি তাদের গড়ে তুলছে বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর সোনালি সময় পার করছে। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ—যা উন্নয়ন, অর্থনীতি ও উদ্ভাবনের জন্য এক বিরাট শক্তি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) জানিয়েছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৫৭ লাখে। এর মধ্যে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১১ কোটি ৭১ লাখের বেশি, যা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে পারবে।
তারা উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল মার্কেটিং, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ, সামাজিক উদ্ভাবন, আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপনা এবং স্টার্টআপ এক্সিলারেটরে অংশগ্রহণের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ সবই প্রমাণ করে, আমাদের তরুণ প্রজন্মই হতে পারে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের মূল চালিকা শক্তি।
তরুণদের এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে তাদের জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা, অনুকূল পরিবেশ, নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা এবং নেতৃত্ব গড়ে তোলার সুযোগ। রাষ্ট্র, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা তরুণদের এগিয়ে নেবে, আর তারাই গড়ে তুলবে সমৃদ্ধ ও আলোকিত বাংলাদেশ।
আমরা যারা উচ্চশিক্ষার সাথে জড়িত আছি, আমাদের দায়িত্ব হবে তাদের সত্যিকারের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে, এই তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ করে দেওয়া।
ড. শাহ আহমেদ : ডিরেক্টর, স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স, উত্তরা ইউনিভার্সিটি