পর্যটন কীভাবে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে?

পর্যটন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO)-এর মতে, পর্যটন খাত বৈশ্বিক জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জোগান দেয় এবং কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস। উন্নত ও উন্নয়নশীল—উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটকদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪৫ কোটি, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখেছে এবং প্রাক-মহামারির প্রায় ৯৯ শতাংশ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যা বছরে প্রায় ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জাপানে প্রায় ৩৯০ লাখ বিদেশি পর্যটক এসেছে, যা তার পূর্ববর্তী রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে পর্যটন হতে পারে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর মাধ্যম। পর্যটনের মাধ্যমে গড় আয় বৃদ্ধি পায়। পর্যটনের সবচেয়ে সরাসরি অর্থনৈতিক অবদান হলো আয় সৃষ্টি। পর্যটকেরা যখন কোনো দেশে বা অঞ্চলে ভ্রমণ করে, তখন তারা আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিনোদন ও কেনাকাটায় অর্থ ব্যয় করে। এই ব্যয় সরাসরি স্থানীয় ব্যবসা ও পরিষেবা খাতে আয় হিসেবে যুক্ত হয়।
২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায়—যার মধ্যে ৩০ কোটি মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করেছে। ২০২৫ সালে পর্যটন খাতের মোট অবদান হবে প্রায় ১১.৭ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার (বিশ্ব জিডিপির আনুমানিক ১০.৩ শতাংশ)—যা ২০১৯ সালের প্রাক-মহামারি উচ্চতার থেকেও বেশি।
একই বছর আন্তর্জাতিক পর্যটক ব্যয় হবে প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার, যা ২০১৯ সালের রেকর্ড ১.৯ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার এর চাইতেও অনেক বেশি। পর্যটন খাত বিশ্বজুড়ে ২০২৫ সালে প্রায় ৩৭ কোটি মানুষকে কর্মসম্পন্ন রাখবে—যা একটি বড় অর্থনৈতিক খাত হিসাবে গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৪-২৫ সালে পর্যটন থেকে মোট অর্থনৈতিক অবদান ছিল প্রায় ২.৩৬ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২৪-২৫ সালে পর্যটন থেকে মোট অর্থনৈতিক অবদান ছিল প্রায় ২.৩৬ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। পর্যটকরা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং ও পরিবহনে ব্যয় করে স্থানীয় ব্যবসা ও পরিষেবা খাতকে শক্তিশালী করে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রতিবছর দেশি ও বিদেশি পর্যটকেরা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্রান্সপোর্ট ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবায় বিপুল অর্থ ব্যয় করে। এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙা হয়। ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বেড়ে ১.৬৫ কোটি পর্যটক হয়েছে এবং মোট পর্যটক ব্যয় ২০-২১ বিলিয়ন ইউএস ডলার এর মতো ছিল।
এছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি পর্যটন শিল্পের আরেকটি সরাসরি অবদান কারণ পর্যটন একটি শ্রমঘন শিল্প। এই খাতে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। সরাসরি কর্মসংস্থান হতে পারে যেমন হোটেল ও রিসোর্ট কর্মী, ট্যুর গাইড, ট্রাভেল এজেন্ট ব্যবসা, এয়ারলাইন্স ও পরিবহন কর্মী তৈরি।
পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রায় ১.৪ কোটি লোক ২০২৫ সালে চাকরি পাবে এবং মোট কর্মসংস্থান হবে ৩৭ কোটিতে পৌঁছাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় ১ জনের মধ্যে ১০ জন পর্যটন-সম্পর্কিত খাতে কাজ করে—যা একটি বিশাল কর্মসংস্থান খাতকে নির্দেশ করে। সিঙ্গাপুরে পর্যটকরা বিমানবন্দর, হোটেল, শপিং ও বিনোদনে ব্যয় করে যা জিডিপিতে বড় অবদান রাখে।
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে পর্যটন হতে পারে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর মাধ্যম। পর্যটনের মাধ্যমে গড় আয় বৃদ্ধি পায়। পর্যটনের সবচেয়ে সরাসরি অর্থনৈতিক অবদান হলো আয় সৃষ্টি। পর্যটকেরা যখন কোনো দেশে বা অঞ্চলে ভ্রমণ করে, তখন তারা আবাসন, খাদ্য, পরিবহন, বিনোদন ও কেনাকাটায় অর্থ ব্যয় করে। এই ব্যয় সরাসরি স্থানীয় ব্যবসা ও পরিষেবা খাতে আয় হিসেবে যুক্ত হয়।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগ ও চাকরির সুযোগও বাড়ছে। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হতে পারে কৃষক (খাবার সরবরাহকারী, হস্তশিল্পী, নির্মাণ শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকশিত হওয়ায় লক্ষাধিক মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যা দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখে। ২০২৫ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় মোট প্রায় প্রায় ২০ লাখ পর্যটক এসেছে এবং গত কয়েক মাসে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে।
শুধু তাই নয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন পর্যটন শিল্পের আরেকটি দিক। বিদেশি পর্যটকেরা যখন কোনো দেশে ভ্রমণ করে, তখন তারা নিজ দেশের মুদ্রা (ডলার, ইউরো ইত্যাদি) ব্যয় করে। এর ফলে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, যা ওই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কমায়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সহায়তা করে, মুদ্রার মান স্থিতিশীল রাখে। এক্ষেত্রে উদাহরণ, মালদ্বীপের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো পর্যটন। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগই আসে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে।
স্পেনে ২০২৪ সালে ৯.৪ কোটি আন্তর্জাতিক পর্যটক এসেছে, যা আগের বছরের থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ছিল এবং পর্যটন থেকে আয় ছিল ১২৬ বিলিয়ন ইউরো এবং এটি স্পেনের জিডিপির প্রায় ১২.৩ শতাংশ। চীনা পর্যটন খাত অর্থনীতিতে প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার অবদান রাখে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানে করে।
যদিও বিদেশি পর্যটন চীনে কম (বিশেষ করে বিদেশি ভ্রমণের ক্ষেত্রে), দেশের অন্তর্ভুক্ত পর্যটন (domestic tourism) অত্যন্ত শক্তিশালী, যা রিটেইল, পরিবহন ও হোটেল শিল্পকে শক্তিশালী করে কিন্তু অর্থনীতির বড় অংশকে স্থানীয় ভ্রমণ ও ব্যয়ের মাধ্যমে চালিত করে। পর্যটক সংখ্যা বেশি থাকায় ইউরোপে হোটেল, পরিবহন, রেস্তোরাঁ, সংস্কৃতি-ভিত্তিক ব্যবসায় বিশাল অর্থ প্রবাহিত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যটক যারা খরচ করেন তা সরাসরি বিদেশি মুদ্রা আয় হিসেবে কাজ করে।
পর্যটন শিল্পের আরেকটি দিক হলো সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পর্যটন খাত থেকে সরকার বিভিন্নভাবে রাজস্ব পায়— যেমন ভ্যাট ও বিক্রয় কর, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ট্যাক্স, এয়ারপোর্ট ফি, পর্যটন লাইসেন্স ফি প্রভৃতি। এই রাজস্ব সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারে। থাইল্যান্ডে পর্যটন খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব সরকার অবকাঠামো ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যবহার করে থাকে।
আরও পড়ুন
পর্যটনের বিকাশের জন্য উন্নত অবকাঠামো অপরিহার্য। তাই পর্যটন কেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলে সড়ক ও মহাসড়ক, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, উন্নত হয়, যা স্থানীয় জনগণের জীবনমানও উন্নত করে। যেমন বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে পর্যটন বাড়ার ফলে রাস্তা, হোটেল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
পর্যটন শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়; এটি গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকাতেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। ইকো-ট্যুরিজম ও কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজমের মাধ্যমে—স্থানীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ হয়, গ্রামীণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়, শহরমুখী অভিবাসন কমে। নেপালের পাহাড়ি গ্রামগুলোয় ট্র্যাকিং ট্যুরিজম স্থানীয় জনগণের আয়ের প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে।
পর্যটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দিক হলো গুণিতকের প্রভাব। পর্যটকের ব্যয় করা একটি টাকা সরাসরি এক খাতে ব্যবহৃত হলেও পরোক্ষভাবে আরও অনেক খাতে প্রভাব ফেলে। একজন পর্যটক হোটেলে টাকা দেয়, হোটেল কর্মী বেতন পায়, কর্মী বাজারে কেনাকাটা করে, ফলে ব্যবসায়ীর আয় বাড়ে। এভাবে একই টাকা অর্থনীতিতে বারবার ঘুরে মোট আয় বৃদ্ধি করে।
পর্যটন থাইল্যান্ডের জিডিপিতে বড় অবদান রেখে থাকে এবং আন্তর্জাতিক পর্যটক দেশটির রিটেইল, ফুড সার্ভিস ও পরিবহন খাতে ব্যয় করে। তবে ২০২৫ সালে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দেয় যেমন বিশেষভাবে চীনা পর্যটকের সংখ্যা কমে আসা, যা অর্থনৈতিক আয়কে কিছুটা প্রভাবিত করে।
২০২৪ সালে ভারত পর্যটন থেকে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করেছে। ভারতে ২০২৩ সালে বিদেশি পর্যটক সংখ্যা প্রায় ৯.৫২ মিলিয়ন ছিল—যা অনেক উন্নত দেশগুলোর তুলনায় কম। শ্রীলঙ্কায় পর্যটন সরাসরি বিদেশি মুদ্রা আয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, বিশেষত ভারত ও ইউরোপ থেকে পর্যটকদের মাধ্যমে। যদিও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে, পর্যটনের উন্নতি দেশটির বন্দর ব্যবসা ও খুচরা খাতে সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি কারণ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অনেক নাজুক। সঠিক পরিকল্পনা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই খাত দেশের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হতে পারে। এজন্য প্রথমেই একটি আধুনিক ও সমন্বিত জাতীয় পর্যটন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা দরকার, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ নিশ্চিত করা হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।
পর্যটন খাত থেকে সরকার বিভিন্নভাবে রাজস্ব পায়— যেমন ভ্যাট ও বিক্রয় কর, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ট্যাক্স, এয়ারপোর্ট ফি, পর্যটন লাইসেন্স ফি প্রভৃতি। এই রাজস্ব সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন খাতে ব্যয় করতে পারে।
পর্যটন বিকাশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার, সুন্দরবন, সিলেট, বান্দরবান ও রাঙামাটির মতো সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকায় উন্নত সড়ক যোগাযোগ, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, পানি ও ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পর্যটকদের জন্য মানসম্মত আবাসন, তথ্যকেন্দ্র, সাইনবোর্ড ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হয় এবং অবস্থানকাল বৃদ্ধি পায়।
নিরাপত্তা ও সেবার মান উন্নয়ন পর্যটন শিল্পের জন্য অপরিহার্য। পর্যটন এলাকায় পর্যটক পুলিশের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে এবং হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও ট্রাভেল সার্ভিসের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ ও রেটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পর্যটকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করলে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আস্থা বাড়বে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ছাড়া পর্যটন শিল্প টেকসই হতে পারে না। এজন্য হসপিটালিটি ও ট্যুরিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, ট্যুর গাইড ও সেবা প্রদানকারীদের পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং বিদেশি ভাষা শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে উঠলে সেবার মান উন্নত হবে এবং পর্যটন খাত থেকে প্রাপ্ত আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে পর্যটনের পণ্য বৈচিত্র্যকরণ জরুরি। শুধু সমুদ্রসৈকত নির্ভর পর্যটন নয় বরং ইকো-ট্যুরিজম, ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন, গ্রামীণ ও কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটন, চিকিৎসা ও শিক্ষা পর্যটনের মতো নতুন ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে পর্যটন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৈষম্য কমবে।
আন্তর্জাতিক পর্যটন বাজারে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াতে কার্যকর ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং প্রয়োজন। ডিজিটাল মিডিয়া, আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা, বিদেশি ট্রাভেল ব্লগার ও মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার প্রচার জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সুপরিকল্পিত নীতি, উন্নত অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে। পর্যটন তখন দেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে পরিণত হবে। আর এভাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পর্যটন শিল্প বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
সামশাদ নওরীন : সহযোগী অধ্যাপক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
