মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করবে, জামুকাকে না : মেজর হাফিজ

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, জিয়াউর রহমানের মতো সেরা মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে টানাটানি করে আপনারা নব্য রাজাকারে পরিণত হবেন না। জনগণ আপনাদের ঘৃণার চোখে দেখবে।
তিনি বলেন, আজ থেকে একশ বছর পরে কে দেখবে, কে জামুকা আর কে কী ছিল? কিন্তু তখন জিয়াউর রহমান ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রাষ্ট্রপ্রদত্ত জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মেজর হাফিজ বলেন, যুদ্ধের সময় আমাদের সামনে একটাই চ্যালেঞ্জ ছিল কিভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায়। এখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আজ লুটেরা, ব্যাংক চোর, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞে সাধারণ মানুষ যখন ভীত সন্ত্রস্ত, রাজনৈতিক নেতারা পলায়নপর, সেসময় কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সে ঘোষণা জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছে, আশার সঞ্চার করেছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক মাইলফলক।
বিএনপির এ নেতা বলেন, সে সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের আমি সম্মান করি। তারা নির্বাচনে জিতেছিলেন, তাদের সব অধিকার ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার। কিন্তু এ ধরনের ভয়াবহ বর্বর বাহিনীকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের কোনো উপায় ছিল না। বাংলাদেশের ৫টি ক্যান্টনমেন্ট যশোর, জয়দেবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সৈয়দপুর ও চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ৫টি ব্যাটেলিয়ন অবস্থান করছিল। যখন রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনার ফাঁদে ফেলে পাকিস্তান থেকে কামান গোলাবারুদ আনা হচ্ছিল, তখন আমাদের সৈনিকদের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। আমরা রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু পাইনি। তারপর এ গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে রক্ষার জন্য, মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার জন্য, বর্বর দখলদার বাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালী সৈনিকরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার পুরস্কার কী পেলাম? আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বলা হচ্ছে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের গুপ্তচর। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি রাজাকার ছিলেন।
বাংলাদেশে রাজাকার শব্দটি অত্যন্ত ঘৃণিত বলে দাবি করে হাফিজ বলেন, আরও একটি শব্দ ইতিমধ্যে ঘৃণিত হয়ে গেছে, যার নাম জামুকা। এরা নব্য রাজাকারের দল। এরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধ কত ভয়াবহ ছিল, জামুকা-ফামুকা তা কল্পনাও করতে পারে না। মেশিনগান ও যুদ্ধবিমানের শব্দ উপেক্ষা করে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। লাখো জীবনের বিনিময়ে এ দেশ অর্জন করেছি। রাজনৈতিক নেতারা সে সময় ছিলেন শরণার্থী। তবু তাদের শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তারা একটি সরকার গঠন করে বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যারা জীবন দিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করল, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশকে স্বাধীন করল, স্বাধীন বাংলাদেশে তাদেরকে কি সম্মান দেখাবেন না? এতটুকু কি আমরা আশা করতে পারি না?
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, গণফোরাম নেতা মোস্তাক হোসেন প্রমুখ।
এএইচআর/আরএইচ/এমএইচএস