আমি কোন দুঃখে বসে যাব, প্রশ্ন মেয়রপ্রার্থী কায়সারের

‘ঘোড়া মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য জনগণ উদগ্রীব হয়ে আছেন’— এমন দাবি করেছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লাতে গণজোয়ার বইছে ঘোড়ায়। তারা হচ্ছেন লুটেরা শ্রেণি। দুজনই (মনিরুল হক সাক্কু ও আরফানুল হক রিফাত) একজনের (আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার) প্রার্থী। আমি কোন দুঃখে বসে যাব? মানুষ আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।’
মঙ্গলবার (১৪ জুন) বিকেলে কুমিল্লার ধর্মসাগর এলাকার নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘বোঝাপড়া করে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন আপনি’— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, কুমিল্লার মানুষকে দানবীয় শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য যখনই মাঠে নেমেছি তখনই আমাকে ঠেকানোর জন্য, নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য, নৌকা প্রতীকের ডামি প্রার্থী দেয়াল ঘড়ির প্রার্থী এসব গুজব ছড়াচ্ছে। আমি নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, এমনকি ফলাফল নিয়ে ঘরে ফিরে আসব। ঘোড়ার জয় হবে। মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাকে ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারবে না। জনতা আমার সঙ্গে আছে, গণজোয়ার আমার সঙ্গে আছে। কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। আর পরিবর্তনের প্রতীক হচ্ছে ঘোড়া। ঘোড়ার জয় হলে জনতার জয় হবে। জনতার জয় হলে যে রায় আসবে, সেই রায় আমি মেনে নেব।’
নগরবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কায়সার বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেভাবে ২৫ বছর ধরে কথা বলেছি, সেভাবে ভোটের মাঠেও আছি। আমি যে নতুন কুমিল্লা গড়ার আশ্বাস দিয়েছি, যেখানে থাকবে না কোনো দুর্নীতি, মাদক; কুমিল্লা হবে আপনাদের (জনগণের), কোনো এক ব্যক্তির কুমিল্লা হবে না।
নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কালো টাকা আমার নেই। প্রার্থীর স্ত্রীদের কথা অনুযায়ী আমার কাছে টাকা-পয়সা নেই। টাকা-পয়সা না থাকায় কালো টাকা ছড়ানোর সুযোগও নাই। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী ভোটে ব্যয় সীমাবদ্ধতা আছে। তাদের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। তারা যদি শত কোটি টাকা ছড়ায়, এগুলো কুমিল্লার মানুষের টাকা। এই টাকা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যাকে কালো টাকা দেবে, নিয়ে যাবেন। মানুষ কিন্তু ভোট পরিবর্তনের জন্য দেবে। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমর্থন আছে বলেই নৌকা ও দেয়াল ঘড়ির প্রার্থীর থেকে অনেক বেশি ভোট পাব।
‘নৌকার প্রার্থী ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে না’— এমন মনে করে কায়সার বলেন, ‘তাদের ভোটগ্রহণের দৃশ্যমান প্রস্তুতি দেখতে পাচ্ছি না, শুনতেও পাচ্ছি না। আমরা দৃশ্যমানভাবে দেখতে পাচ্ছি, ওনারা ভোট লুটের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তার নিদর্শন হিসেবে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ককটেল ফোটানো হয়েছে।’
ভোটারদের সুষ্ঠু ভোটে আশ্বস্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কায়সার বলেন, জনগণের জন্য ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোনো লুটেরাদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়নি, এটা ইসিকে প্রমাণ করতে হবে। বহিরাগতরা এখনও কুমিল্লায় অবস্থান করছে। তাদের বিরুদ্ধে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নির্বাচনী এজেন্টরা প্রস্তুত, তারা কেন্দ্রে যাবে। প্রশাসন যদি কোনো গ্রুপকে সহযোগিতা না করে, তাহলে আমার এজেন্টদের ঠেকানোর মতো কারও সাধ্য এই কুমিল্লায় নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাক্কু ভাই আমার বড় ভাই ছিল। তিনি অতীতে বিএনপি করতেন। ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে সালাম করার পর থেকে বিএনপির কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে উপস্থিত হননি। যার কারণে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনকালীন তিনি (সাক্কু) বলেন, তার নেতা হাজি বাহার। এতে প্রমাণ হয় উনি আওয়ামী লীগেরই লোক। এখন ওনার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার পথে। বিএনপির সকল নেতা আমার সঙ্গে আছেন, হাজার হাজার মানুষ, নেতাকর্মী ও সমর্থক, আমি যেখানে যায় জনতার ঢল নামে।
ভোটার উপস্থিতি কমানোর জন্যই সিটি করপোরেশন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়নি— এমন দাবি করেন নিজাম উদ্দিন কায়সার। বলেন, ‘প্রত্যক্ষভাবে সরকারি দলকে সহযোগিতা করার জন্য ইসি এ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত আছে। ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’
কায়সার বলেন, ইভিএমে নির্বাচনী ফলাফল মাস্টার ইভিএমে প্রিন্ট কপির মাধ্যমে দেওয়া হয়, কিন্তু কুসিকে সেটা না দিয়ে হাতে লেখা কাগজে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। সবার প্রতি আমাদের আস্থা নেই। এখানে ঘোড়ার ফলাফল নৌকায় ঘোষণা করার সম্ভাবনা আছে। কারণ, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীরা সরকারের সুযোগ-সুবিধাভোগী। তাই এটা নিয়ে আমার সন্দেহ। এ নিয়ে ইসিতে লিখিত দাবি পেশ করার পরও সাড়া পাইনি।’
প্রসঙ্গত, রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু, কামরুল আহসান বাবুল, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম। তবে ঘুরেফিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাতের নাম আলোচনায় আসছে।
কুমিল্লা সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে মোট দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটার। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ও এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন পুরুষ ভোটার। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনে ১০৫ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। পুলিশের তিন হাজার ৬০৮ সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন।
এইউএ/এমএইচএন/এমএআর/