ঢাবিকে স্মার্ট বাংলাদেশের রোল মডেল করার প্রত্যাশা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) স্মার্ট বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। এ কাজটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে ভালো কিছু হবে। আমাদের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি সেটার রোল মডেল হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন : বিতর্কমুক্ত ছাত্রলীগ গড়ার প্রত্যাশা নতুন নেতৃত্বের
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। বিভিন্ন বিষয়, বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন সময়ে ঘটে এবং মাঝখানে পারস্পরিক সম্পর্কের মাঝে ছেদ ঘটে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে যেন সংলাপের ক্ষেত্রটি শেষ না হয়ে যায়; কোনো সংকট তৈরি হলে, আমরা যেন আলোচনার মাধ্যমে সেই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি সেই চেষ্টা করব।
আবাসিক হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমরা সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকবে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে আত্মমর্যাদা নিয়ে ভর্তি হয় সেটা যেন শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে। শিক্ষার্থীদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা যাতে সচল থাকে এটিই আমাদের চাওয়া। আশা করছি, আপনারা (সাংবাদিক) এর সুফল দেখতে পাবেন। যারা নেতিবাচক কার্যক্রম করবে তাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা থাকবে। আমরা চাই যে এ কালচারটাই চেঞ্জ করে ফেলার। এ ধরনের ঘটনা যাতে একটাও না ঘটে।
আরও পড়ুন : সেই ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ সৈকতই হলেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক
ক্যাম্পাসে শব্দ দূষণ ও যান চলাচলের বিষয়ে শয়ন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শব্দ দূষণ ও অতিরিক্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। এর দ্বারা ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোনো ক্ষতি কিছুই হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এটা আমরা করতেই পারি। এটা করার আগে আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলোচনা করব।
সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সংগঠন। আমরা হয়ত এখন অনেকে অনেকভাবে সংগঠনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছি, কিন্তু সংগঠনটি আসলেই ভালো। আমরা আমাদের আদর্শ সমুন্নত রেখে কাজ করব। দুর্গের ধারায় যে ছাত্ররাজনীতি হওয়ার কথা ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেভাবে হয়েছিল, সেটা পুরোপুরি আনতে না পারলেও আমাদের চেষ্টা থাকবে।
তিনি বলেন, সর্বোপরি, আমাদের এই কমিটির লক্ষ্য, প্রধানমন্ত্রীর যে স্মার্ট বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে সেই স্মার্ট সিটিজেনদের রোল মডেল। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখে স্মার্ট সিটিজেন কীভাবে হতে হবে, সেটা রোল মডেল হিসেবে ফলো করবে।
আরও পড়ুন : ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কে এই সাদ্দাম-ইনান?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, আমরা সবাই যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো চাই, সে জায়গা থেকে সামনে আমরা এক সঙ্গে কাজ করব। আমরা ছাত্রনেতা হিসেবে বা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করব। আপনারা হয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা-শান্তি বা যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোর জন্যই আপনাদের মেধা কাজে লাগান। আমার মনে হয়, কোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ থাকলে বা কোনো প্রশ্ন থাকলে, আগে একটু কথা বলে নিলে ভালো হবে। আমাদের পক্ষ থেকে হেল্পফুল মাইন্ড থাকবে এবং আশা করছি আপনারও আমাদের সেভাবে গ্রহণ করবেন।
গণরুমের বিষয়ে সৈকত বলেন, তথাগত গণরুম কালচারে আমরা বিশ্বাস করি না। এ জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে, আমি নিজেই করেছি। যার কিছু সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। একজন ছাত্র যখন আর্থিক অস্বচ্ছতায় ভুগে তখন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে উঠতে দিচ্ছে না। সেখানে তাদের ছাত্রলীগ থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। আমরা চাই সেটা যথানিয়মে আবাসনের ব্যবস্থা করতে। বহিরাগতরা যাতে থাকতে না পারে সে বিষয়েও আমরা সচেষ্ট থাকব।
৩০তম সম্মেলনের দুই সপ্তাহ পর মঙ্গলবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতির দায়িত্ব পান মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক হন তানভীর হাসান সৈকত।
মাজহারুল কবির শয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাট্য-বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক এবং ডাকসুর সাবেক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। করোনার সময়ে মানবিক কাজের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন সৈকত।
এইচআর/এসকেডি