আ.লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিনিধি সভা

১১২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসে শুধু শুনলেন, বলতে পারলেন না কেউ

Md. Saiful Islam

২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:১৯ পিএম


১১২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসে শুধু শুনলেন, বলতে পারলেন না কেউ

১১২ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এসে শুধু শুনলেন, বলতে পারলেন না কেউই। শেষে পেলেন পরবর্তী সভায় কথা বলতে দেয়ার আশ্বাস। এমন দৃশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিনিধি সভায়।

প্রতিনিধি সভা নামে আয়োজন হলেও কেন্দ্রীয় তিন নেতার বক্তব্যই ছিল পুরো সময়। সেখান থেকে ৬ নির্দেশনা পেলেও ময়মনসিংহ থেকে আগত প্রতিনিধিরা কেউই কিছু বলতে পারলেন না।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ময়মনসিংহ বিভাগের প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে প্রতিনিধি সভা নামে আয়োজন হলেও কেন্দ্রীয় তিন নেতার বক্তব্যই ছিল পুরো সময়। সেখান থেকে ৬ নির্দেশনা পেলেও ময়মনসিংহ থেকে আগত প্রতিনিধিরা কেউই কিছু বলতে পারলেন না। আগামী বর্ধিত সভায় বলতে পারবেন এমন আশ্বাস নিয়ে ফিরতে হয়েছে ময়মনসিংহ থেকে আসা প্রতিনিধিদের। 

এ বিষয় নিয়ে অনেকেই আশাহত হলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলেননি।

সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার আহ্বান করা হলেও নির্ধারিত সময়ের পর অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সাংবাদিকদের সভাস্থলের বাইরে যেতে বলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তখন তিনি বলেন, ‌‘আমাদের দলের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হবে আপনারা বাহির হয়ে যান।’

প্রতিনিধি সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী ডা. দীপু মনি। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপিসহ উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

প্রতিনিধি সভাটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।

ডা. দীপু মনির স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠান শুরুর পর ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন প্রতিনিধি সভার প্রধান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কাদের তার বক্তব্যে বলেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়, নিজেদের কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে। আর এখন থেকেই নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলে বিএনপি আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবে, গণপরিবহন আগুনে পোড়াবে, মানুষ হত্যা করবে, গাছ কেটে ফেলবে। তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হবে।

পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সভাস্থলের বাইরে যেতে বলেন সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তখন তিনি বলেন, ‌‘আমাদের দলের ভিতরে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হবে আপনারা বাহির হয়ে যান।’

সাংবাদিকরা বের হয়ে যাওয়ার পর সকল নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে কথা বলেন ডা. দীপু মনি ও বেগম মতিয়া চৌধুরী। এসময় ময়মনসিংহ থেকে আসা নেতাদের কিছু দিক নির্দেশনাও দেন তারা।

‘আগামী বর্ধিত সভায় বিভাগীয় প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনা হবে’ বলে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাটি সমাপ্ত করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‌‘আমরা তাদেরকে শুধু নিদের্শনা দেওয়ার জন্য এনেছিলাম। আমরা জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা কবর। সেখানে সারা দিনব্যাপী কথা বলার সুযোগ থাকবে।’

প্রতিনিধিদের কী কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য বায়োডাটা আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর যাচাই-বাছাই করে কমিটি অনুমোদন দেবে জেলা ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা, কারানির্যাতিত, দলের দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করতে হবে।

এরপর সবার বায়োডাটা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

জেলা বর্ধিত সভার সম্ভাব্য তারিখ আগামী ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সব উপজেলায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমকে অবগত না করে অবৈধভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেসব কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে। আর জেলায় বর্ধিত সভা সম্পন্নের পর মার্চ মাসে বিভাগীয় সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকী যে কয়টা উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন হয়নি সেগুলো রমজানের আগে সম্পন্ন করতে হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রের নির্দেশনার বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন হওয়া উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, যেসব উপজেলার সম্মেলন এখনো বাকি আছে সেগুলোর সম্মেলন আসন্ন রমজান মাসের পূর্বেই শেষ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে আমার জেলায় মোহনগঞ্জ, পূর্বধলা ও আটপাড়া উপজেলার সম্মেলন এখনো বাকি আছে। আশা করি এই সম্মেলনগুলো কেন্দ্র নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো।

আমিরুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখতেও কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো ধরণের গ্রুপিং রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক জেলা নেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো আশা নিয়ে এসেছি, আমাদের সমস্যার কথা বলবো। কিন্তু তার আর সুযোগ হলো না। আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হবে বলেছিল কিন্তু নির্বাচনে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বর্ধিত সভায় যদি আলোচনা হয় তাহলে আজকে এই সভার কী প্রয়োজন ছিল?

এমএসআই/এমজে

Link copied