আগে যারা দোকান থেকে জিনিস কিনত তারা এখন টিসিবির লাইনে

‘আগে যারা দোকান থেকে জিনিস কিনত তারা এখন টিসিবির লাইনে’— এমন অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অবৈধ এই সরকার।’
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্যে দিয়ে তারা এটা করছে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র তো একেবারেই শেষের দিকে পৌঁছে গেছে। অন্যান্য যে বিষয়গুলো আছে, জীবন রক্ষা করা, করোনায় স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার বিষয়, মৌলিক খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার যে অধিকার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমাদের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য ন্যূনতম কোনো সুবিধা পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি। আমার বাসায় কাজ করে তিনজন লোক। তারা গত কয়েকদিন ধরে উত্তরার একটি সেন্টারে গিয়ে টেস্ট না করতে পেরে ফিরে আসে। শেষে আজ ভোর ৬টায় ৫০ নম্বর সিরিয়াল পেয়েছে। সেখানে দিনে ১৫০ জনের বেশি টেস্ট হচ্ছে না। এখানে সরকার প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। সারাদেশে কিন্তু টেস্টের সুবিধাও নেই। ২০টি জেলায় করোনা টেস্টের কোনো সুবিধা নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, কি চরম উদাসীনতা, দুর্নীতি, ব্যর্থতা হতে পারে সরকারের, ১০ মাস আগে এয়ারপার্টে এসে পৌঁছানো বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দেওয়া করোনা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড় দেওয়া হয়নি। সেখানে অক্সিজেন, ভ্যান্টিলেটর, ক্যানোলা আছে।
শুধু করোনা নয় রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বক্ষেত্রে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্যান্য দেশে ক্রিসমাসের সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। মুসলিম দেশগুলো রমজানের সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। অথচ আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। দুভার্গ্যজনকভাবে এইবার সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে একটা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। এটা সব সময় থাকে। আমাদের সময়ও ছিল। কিন্তু সরকারকে এইগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাজার সিন্ডিকেটগুলো সবই আওয়ামী লীগের ও সরকারের মদদপুষ্ট লোকজন দিয়ে পরিচালিত বিধায় এরাই যোগসাজশ করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। আগে মানুষ টিসিবির ট্রাকে কম মূল্যে জিনিসপত্র পাবে বলে আশায় থাকত। কিন্তু এখন তারাও নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নবিত্তের খাবারের সংস্থান কঠিন হয়ে পড়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, অংশ নেওয়া ৩৪.৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড়ে পারিবারিক উপার্জন কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। মধ্য ও নিম্নবিত্তের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নয়ত বেতন পাচ্ছে না, অথবা বেতন অর্ধেক করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ এই অবৈধ সরকার, যারা নির্বাচিত নয় তাদের সরিয়ে একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। ২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে সরকার যে ঘটনাগুলো ঘটলো, আমি এটাকে পুরোপুরি পরিকল্পিত বলবো।
ড. জাফরুল্লাহর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই সঠিক বক্তব্যের জন্য। তিনি বলেছেন এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ জামিন দেওয়া প্রয়োজন। আমরাও দাবি জানাচ্ছি, খালেদা জিয়াকে পূর্ণাঙ্গ জামিন দিতে।
এএইচআর/এসকেডি