সর্বতোভাবে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক ওলামায়ে কেরামদের

জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে সর্বতোভাবে ইসরায়েলকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন ওলামায়ে কেরামরা। তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইতিহাসের নিকৃষ্ট অপরাধ সংগঠিত করে চলেছে ইসরায়েল। যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। তাই মত-পথ নির্বিশেষে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের পক্ষে এবং দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানানো সবার ঈমানী ও মানবিক দাবি বলে মন্তব্য করেন তারা।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বকীয়তা রক্ষা ও দখলদার ইসরাইলী বর্বতার প্রতিবাদে মুসলিম উম্মাহর করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য দেন মাওলানা আব্দুল হামিদ, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুর রহমান, দেশের বাইরে থেকেও বিভিন্নভাবে যুক্ত হন কয়েকজন অতিথি।
গুগল মিটে লাইভ বক্তব্য দেন ফিলিস্তিন ওলামা পরিষদ প্রধান ড. নওয়াফ তাকরুরি, অডিও বার্তা প্রেরণ করেন ভারত দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী ও পাকিস্তান ওলামায়ে কেরামের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান।
ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিলিস্তিনের মজলুম মানুষকে আর্থিক সহায়তা করা ও মুজাহিদ বাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা উচিত।

তিনি বলেন, ইঙ্গ-মার্কিনের সহযোগিতায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে। মুসলিম বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে ইসরায়েলকে রুখে দিতে হবে।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ইসলামশূন্য নতুন শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা করছে। দেশের অভিভাবকরা এ কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে মাঠে নেমেছে। অভিভাবকরা তাদের আদরের সন্তানদের নিয়ে চরমভাবে উদ্বিগ্ন।
এ অবস্থায় দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা চেতনা অনুযায়ী নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের দাবি জানান। তিনি জাতিসত্তা বিরোধী শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে সর্বত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মুসলমান বায়তুল মুকাদ্দসকে হৃদয়ে ধারণ করেন। কাজেই মানবতার দুশমন ইসরায়েল মুসলমানের হৃদয় থেকে মসজিদুল আকসার ভালোবাসা মুছে দিতে পারবে না।
বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ইসরাইয়েলের পণ্য সর্বতোভাবে বর্জনের লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইসরায়েলের মুসলিম জাতিসত্তা বিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড রুখে দিতে হবে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশে কার্যকর কোনো প্রতিবাদ না হলেও এখন দেরিতে হলেও তা শুরু হয়েছে। তবে এ আন্দোলন আরও জোরালো করতে হবে।

জাতীয় সেমিনারের সাত দফা প্রস্তাবনা পাঠ করা হয়–
১. মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসার হেফাজত এবং সন্ত্রাসী দখলদার ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের কবল থেকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি উদ্ধারের জন্য বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
২. মুসলমানদের পবিত্র স্থাপনা এবং পবিত্র ভূমিগুলো সুরক্ষার জন্য বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে সম্মিলিত সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩. আজকের সেমিনারে বাংলাদেশের সর্বস্তরের ওলামা মাশায়েখ এবং বাংলাদেশের প্রিয় মানবতাবাদী গণমানুষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় বর্বর ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং গাজ্জার হামাসসহ সকল প্রতিরোধ যোদ্ধার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করছে।
৪. আজকের সেমিনার ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানতে সকল ইসরায়েলি ও ইহুদি পণ্য বর্জন করার জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের সকল ওলামায়ে কেরাম এবং মসজিদের ইমাম খতিবদের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প দেশীয় পণ্য ব্যবহারে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছে।
৫. এ সেমিনার যেসব রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করছে; তাদের প্রতি নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করছে। বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক ছিন্নের আহ্বান জানাচ্ছে।
৬. ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার লড়াইয়ে শহীদ, আহত, বাস্তুহারা, নিপীড়িত মজলুম মুসলিমদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
৭. মসজিদে আকসার সুরক্ষা এবং ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি দখলদার ইহুদিদের কবল থেকে পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নয়, বরং এ দায়িত্ব গোটা বিশ্বের মুসলমানদের।
জেইউ/এসএসএইচ