৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সংগঠনটি বলছে, ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা নবায়ন করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে। দিনটিকে দেশবাসী কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।
নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালে বিনা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ২০১৮ সালে নিশি ভোটে এবং আগামী ৭ জানুয়ারি একতরফা ‘ডামি’ নির্বাচন করে ক্ষমতা দখলে রাখতে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। ফলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। গণদাবি উপেক্ষা করে সরকার তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে একতরফা নির্বাচনী তামাশা আয়োজন করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেলেছে। এ নির্বাচন যে নির্লজ্জ প্রহসন তা ভোটের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া দেখলেই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। একদিকে আওয়ামী নৌকার প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী, ডামি প্রার্থী, ১৪ দলের উচ্ছিষ্ট ভোগী শরিকদের প্রার্থী, সুবিধাভোগী জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী সবাইকেই গণভবন থেকে শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিচ্ছে।
আরও পড়ুন
তারা আরও বলেন, আওয়ামী সরকার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণ যেসব সীমালঙ্ঘন করেছে তা এখন কাজী জাফর উল্লার মতো সরকার দলীয় নেতাদেরও অনেকেই বলতে বাধ্য হচ্ছেন। আওয়ামী লীগ বর্তমানে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের পাহারাদার দল এবং পার্লামেন্টকে কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত করেছে তা মন্ত্রী-এমপিদের এবং সরকার দলীয় প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বৃদ্ধির বিবরণী দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। তাছাড়াও এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ কোটিপতি রয়েছে। পাতানো নির্বাচনের সংসদে এই কোটিপতি প্রার্থীরা যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, লুটপাটকারী, পাচারকারীদের স্বার্থরক্ষা করবে তা হলফ করে বলা যায়।
জোট নেতারা আরও বলেন, বিরোধী দলহীন এই একতরফা নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর অপচেষ্টা হিসেবেই যে এই ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনী তামাশা তা দেশবাসী ধরে ফেলেছে। ফলে ভোটের মাঠে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই। সরকার চালাকি করে জনগণকে ধোঁকা দিতে গিয়ে এখন নিজেরাই নিজেদের ফাঁদে পড়েছে। যার প্রকাশ ঘটছে সারা দেশে নৌকা আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি খুনাখুনি। একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে সরকার দেশকে এক ভয়ংকর সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। এই নির্বাচন বন্ধ করে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আগামী ৭ জানুয়ারির একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বর্জন ও রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, বক্স কালভার্ট রোড, বিজয় নগর ঘুরে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ মার্ক্সবাদী নেতা জয়দীপ ভট্টাচার্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম।
এমএইচএন/এসএসএইচ