ভাইকে নিয়ে বিপাকে এমপি নূর মোহাম্মদ
উপজেলা নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে দলীয় প্রতীক তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দল থেকে দেওয়া হয়নি মনোনয়নও। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ক্ষমতাসীনদের এ উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের স্বজনেরা।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভিযোগ, স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রভাব আরও দৃঢ় করতে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ উপজেলায় আত্মীয়দের জনপ্রতিনিধি বানাতে চান। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন অনেকে। তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে।
জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। তার আপন ভাই নজরুল ইসলাম সাত্তার। যিনি এবার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানপ্রার্থী। জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা থেকে লড়তে চান তিনি।
আরও পড়ুন
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা, কোনো সংসদ সদস্য বা মন্ত্রীদের স্বজনেরা ভোটের মাঠে লড়তে পারবেন না। এতে কর্ণপাত নেই নজরুল ইসলাম সাত্তারের।
স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রভাব আরও দৃঢ় করতে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ উপজেলায় আত্মীয়দের জনপ্রতিনিধি বানাতে চান। আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন অনেকে। তবে, এর ব্যতিক্রমও রয়েছে
তার ভাষ্য, তিনি বর্তমানে দলের কোনো পদে নেই। যদিও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন নির্বাচন করতে পারব না? আমি দলের কোনো পদে নাই। আমার সংসার (সংসদ সদস্যের সঙ্গে তিনি থাকেন না) তো আলাদা। আমাকেই সব ম্যানেজ করতে হয়।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অনেকটা অসহায় বোধ করেন জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘সে (নজরুল ইসলাম সাত্তার) আমার কথা শোনে না। আমি এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত দিয়ে বলেছি।'
জানা গেছে, আপন ভাই সংসদ সদস্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সমর্থনে মাঠে আছেন নজরুল ইসলাম সাত্তার। সূত্র জানায়, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন মিয়ার নেতৃত্বে তার পক্ষে চলছে প্রচারণা। এ ছাড়া তাকে সমর্থন দিচ্ছেন উপজেলার ছাত্রত্বহীন ছাত্রলীগের নেতারা, রয়েছেন বিবাহিত ছাত্রলীগনেতা ও বিভিন্ন সময়ের বিতর্কিতরা। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মো. রাজন মিয়াকে অনুসরণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলার অধীনে আটটি ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইউনিয়নের কমিটি এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি আছে আরও সাতটি। এসব ইউনিয়নে যারা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী, তাদেরকে পদের লোভ দেখিয়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চেয়ারম্যানপ্রার্থীর প্রচারণার কাজে লাগানো হচ্ছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের স্থানীয় এক কর্মী বলেন, সাত্তার সাহেবের পক্ষে প্রচারণা করতে আমাদের বলা হয়েছে। তা না হলে আমাদের পদ দেবে না। তারা আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বসে আছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ থাকে তিন মাস। আবার সেই কমিটির ১২ জন বিবাহিত। একেকজনের নামে আছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। তারপরও সেন্ট্রাল কমিটি তাদের কিছু বলে না। আমরা বলতে গেলে তো বিপদে পড়ব। তাই বাধ্য হয়ে তাদের নির্দেশ মানছি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদধারী মো. রাজন মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চাঁদাবাজি, বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের পদধারী হলেও বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই এ নেতার। তবুও সংগঠনের নাম ব্যবহার করে নিজের বিশাল এক বলয় তৈরি করে রেখেছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. রাজন মিয়াকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কল ধরেননি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’
এমএসআই/এমএআর