নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে আলোচনা শুরুর আহ্বান
জান-মালের নিরাপত্তা, দখলদারিত্ব বন্ধ ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
রাজনৈতিক দলগুলোর জোটটি বলছে, ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, সরকার গঠনে সব রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে মতামত নেওয়া হবে। অন্য কোনো দলের সাথে আলোচনা হয়েছিল কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পূর্বে আমাদের বাম গণতান্ত্রিক জোটের মতামত না নিলেও আমরা এই সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে দেশ পরিচালনায় এগোনোর আহ্বান জানাচ্ছি।
রোববার (১১ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জোটের সমন্বয়ক বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তাই নির্বাচনে ‘না’ ভোটের বিধান, নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করলে প্রত্যাহার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করা এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাসহ দেশে যে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞসহ অরাজক ও নৈরাজ্যকর সহিংসতা বন্ধ, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইসঙ্গে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং নিহতদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন, এবং সব নিহত ও আহতদের প্রকৃত তালিকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশের দাবিও জানানো হচ্ছে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি হস্তক্ষেপ, বল প্রয়োগ, গুলিবর্ষণ আইন করে বন্ধ করা, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব বন্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িত স্থাপনা যারা ভাঙচুর করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; স্থাপনাসমূহ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা; সরকারি বিভিন্ন পদে ইতোমধ্যে যে সব দলীয় লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের অব্যাহতি দিয়ে সৎ, দক্ষ, পেশাদারিত্বসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া; নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ লুটপাট-দুর্নীতি বন্ধ, বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা, খেলাপি ঋণ উদ্ধার; দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও অর্থপাচারকারীদের গ্রেপ্তার, বিচার ও তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক হল খুলে ক্লাস শুরু করা, সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা বন্ধ; গ্রাম শহরের শ্রমজীবীদের জন্য স্বল্প মূল্যে রেশনিং চালু, শিল্প কল কারখানা, ব্যাংক বীমা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পূর্ণ চালু ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অর্থনীতি সচল করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে বলে আশাব্যক্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।
এমএইচএন/কেএ