রোজিনার জামিন বিষয়ে শুনানির বিলম্ব ‘ওল্ড প্রাকটিস’

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন বিষয়ে শুনানির পর রায় দিতে বিলম্বের ঘটনাকে ‘ওল্ড প্র্যাকটিস’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এটাই রাষ্ট্রের বর্তমান চরিত্র। কোথায় যাবেন? জুডিশিয়ারি? আজ রোজিনার জামিনের শুনানি হয়েছে। রায় দেবে রোববার! সেইম ওল্ড প্র্যাকটিস।’
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে তিন ঘণ্টাব্যাপী এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির উদ্যোগে ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম, মুক্তির পথ কী?’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সঙ্গে যে কী আচরণ করা হয় সেটা ধর্তব্যের মধ্যে নিই না। আমরা রাজনীতিবিদ, আমাদের প্রাপ্য- এটা হবে। কিন্তু দ্যাটস দি রিয়েলিটি। বুঝতে হবে এটাই রাষ্ট্রের চরিত্র। এ রাষ্ট্র যারা শাসন করছেন তারা রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতেও করেছিলেন, সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্য আজকে আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যাদের একসময় জনগণের ভিত্তি ছিল। তারা জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন, তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তারা জনগণের পাশেও নেই। তাদের এখন কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলা অথবা পুলিশ, র্যাব এ ধরনের সম্প্রদায়কে নিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। এটা একদিকে যেমন লজ্জার, ধিক্কারের, আরেকদিকে তেমনি ভীতিরও।
আজকে ফ্যাসিবাদী ভীতি ছড়িয়ে সমস্ত দেশকে অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সেই ফ্যাসিবাদকে আমাদের পরাজিত করতে হবে। সেটাই একমাত্র মুক্তির পথ। সংগ্রাম-আন্দোলন এবং মুখোমুখি হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিক যে বাংলাদেশের আজকের চেহারা, তারই একটা অংশ। শি ইজ নট দ্যা অনলি ভিকটিম, এখানে ধারাবাহিকভাবে ইতোপূর্বে এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে। গণমাধ্যমের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সাংবাদিকদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তারা কিন্তু একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সেই লক্ষ্যটি হচ্ছে, দেশে এমন একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কোনো বক্তব্য থাকবে না, ভিন্নমত ধারণ করার, পোষণ করার কোনো উপায় থাকবে না।
রোজিনা ইসলামের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, যখন আমাদের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যায়, যখন রিমান্ডে দেয়, গুম করে, খুন করে তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সংবাদ মাধ্যম সেগুলো সম্পর্কে নীরব থাকে। কেউ কেউ আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে সেটাকে ডিফেন্ড করে সরকারের ভূমিকাটা কী। এই জিনিসগুলো কিন্তু ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। আজকে কেন এই অবস্থা?
রোজিনা ইসলামের পক্ষে সব সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষই তারা একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন। ৪/৫ দিনও যায়নি। একজন উপদেষ্টা হয়ে গেছেন সরকারের, আর কয়েকজনকে হালুয়া-রুটি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার কথাগুলোর জন্য দুঃখিত, আমি স্পষ্ট করে বলছি।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা হালুয়া-রুটির সন্ধানে থাকব, রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী সাংবাদিক যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে আজকে সত্য কথাগুলো তুলে ধরে তাদের রক্ষা করতে পারবে না। এটাই বাস্তবতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি রোজিনাকে বাহবা জানাই। একই সঙ্গে তাকে শ্রদ্ধা করি তিনি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সত্য প্রচার করেছেন এবং তার ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, এ নির্যাতনের মধ্যেও তিনি নতি স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন যে 'আমার প্রতি অন্যায় হয়েছে'।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে গণমাধ্যম যে বন্দি তার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র একটি প্রমাণ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন, হেনস্তা। আমি মনে করি বাংলাদেশে যে সরকার রয়েছে, এই সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার। তাদের বাকশাল শাসন প্রতিষ্ঠার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রতিফলন হচ্ছে রোজিনার ওপর এই ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এএইচআর/এসএম/জেএস