‘ভারত একাত্তরে আ.লীগের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানে আঘাত করেছিল’

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ১৯৬৫ সালে আমাদের সীমান্তে আপনারা (ভারত) পরাজিত হয়েছিলেন। সেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনারা ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পাকিস্তানের ওপর আঘাত করেছিলেন। আমরা বলতে চাই ১৯৬৫ সালের যে ঈমান সেই ঈমান এখনো বাংলাদেশের মানুষের অন্তরে জাগ্রত রয়েছে। অতএব হুমকি দিয়ে লাভ হবে না।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভয়েস অব টাইমসের উদ্যোগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পুঁজি করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের দাবিতে ও মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষ্যে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত একটি বৃহৎ রাষ্ট্র। তারা আমাদের প্রতিবেশী। তারা আমাদের জাতীয় পতাকায় আগুন দিয়েছে। আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা করেছে। আপনারা শুধু পতাকায় আগুন দেননি, আপনারা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে আগুন দিয়েছেন। এটা আপনাদের জন্য ভালো হবে না।
তিনি বলেন, একদিন পরেই বিজয় দিবস পালিত হবে। আগামীকাল বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ১৮ বছর পর মন খুলে, প্রাণ উজাড় করে স্বাধীনভাবে বিজয় দিবস পালন করবে। ১৮ বছর এ দেশে মানুষের বুকে ফ্যাসিবাদ এমনভাবে চেপে বসেছিল যে, মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না, ভোটের অধিকার ছিল না। মানুষের স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার ছিল না। মানুষের নিরাপত্তা ছিল না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কারো বেডরুমের নিরাপত্তা দেওয়ার আমার সময় নেই। যিনি সুরক্ষিত জায়গায় নিরাপত্তা দিতে পারবেন না তিনি কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা দেবেন।
আরও পড়ুন
জামায়াতের এ নেতা বলেন, সেই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের মানুষকে এমন নির্যাতন করেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। তারা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষকে ধরে নির্যাতন করেছে। তারা মানুষকে ধরে নিয়ে আয়নাঘরে বন্দি করে রেখেছিল। কত মানুষকে এভাবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল তার হদিস নেই। এভাবে তারা নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে দেশের মানুষকে পরাধীন করে রেখেছিল।
হেলাল উদ্দিন বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় এসেই কোমর ভেঙে দিয়েছে... বিডিআর বিদ্রোহের নাম করে ৫৭ জন চৌকস সেনাবাহিনীর অফিসারকে হত্যা করেছিল। এরপর জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের ধরে নিয়ে গিয়ে নাটক সাজিয়ে আইনের নামে অবিচার করে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে একের পর এক ফাঁসি দিয়েছে এবং জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করেছে ১১ জন নেতাকে।
তিনি আরও বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) শাপলা চত্বরকে রক্তে রঞ্জিত করেছিল। এভাবে ভারতবিরোধী শক্তিকে নিঃশেষ করে বাংলাদেশে একটি রাম রাজত্ব কায়েম করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিল।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, অনেক নেতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এভাবে পালানোর ইতিহাস বাংলার জমিনে ছিল না। লক্ষণ সেনের পরে তিনিই পালিয়ে গেছেন। আজ তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছেন কিন্তু ষড়যন্ত্র বন্ধ করেননি। তিনি সেখান থেকে উসকানি দিচ্ছেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে মিস গাইড করছে। সেখানকার মিডিয়াকে উসকে দিচ্ছেন। এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই অপপ্রচার করে কোনো লাভ হবে না। আপনারা সত্য খবর পরিবেশন করুন। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। আমাদের দেশে কোনো সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতন হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। অপপ্রচার করে বাংলাদেশের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বলতে চাই, আপনারা সঠিক সংবাদ প্রচার করুন। পরিস্থিতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরুন।
বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ বলেন, একটি দেশে যদি অনির্বাচিত সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকে তাহলে সেখানে পুনরায় ফ্যাসিবাদের উত্থান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক আমরা সেটি চাই না।
তিনি আরও বলেন, একটা কথা বার বার বলা হয়, ভারত নাকি যুদ্ধের সময় আমাদেরকে সাহায্য করেছে, আমি এ বিষয়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। ভারত তার স্বার্থে বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করার ভান করেছিল। এর কারণ হলো, ভারত তাদের প্রয়োজনে এবং করদ রাজ্য হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে পারবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। বাংলাদেশে একটি পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে তারা দখল না করলেও বাংলাদেশকে তাদের মতো করে ব্যবহার করতে পারবে। সে কারণেই তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদেরকে সাহায্য করার ভান করেছে।
ভয়েস অব টাইমসের সভাপতি মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, এনডিপির মহাসচিব মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমুখ।
ওএফএ/এসএসএইচ