২০১৩ সাল ছিল আওয়ামী লীগের হত্যার মহোৎসব : শফিকুল আলম

জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী তকমা দিয়ে ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে গুম ও খুন করাই ছিল পতিত সরকারের অন্যতম কৌশল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করার জন্য ২০১৩ সাল ছিল আওয়ামী লীগের গুম ও খুনের এক মহোৎসব।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর এফডিসিতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের গণসমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, পতিত আওয়ামী সরকার বরাবরই হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার কৌশল অবলম্বন করেছিল। ২০১৩ সালে হেফাজতের ওপর ক্র্যাকডাউন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সরকার নিজেদের জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রমাণের চেষ্টা করেছে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কাভার করা ছিল আমার সাংবাদিকতা জীবনে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। সেই রাতে বারাকাহ, ইসলামী হাসপাতাল ও সিদ্ধিরগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে গুলিবিদ্ধ অনেকের লাশ পাওয়া গেলেও সরকার তা স্বীকার করেনি। হেফাজতের সমাবেশে কতজনের মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক তথ্য আমরা এখনো জানতে পারিনি। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম নিজেরাও প্রকৃত আহত ও নিহতের তথ্য অনুসন্ধান করতে পারে।
আরও পড়ুন
ছায়া সংসদে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ৫ মে গভীর রাতে হেফাজতে ইসলামের গণসমাবেশে যৌথবাহিনীর অভিযানে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায়। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর এই বর্বর গণহত্যার বিচার এখন সময়ের দাবি। ৫ মে রাত ৩টার দিকে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের অভিযানের আগে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে যৌথবাহিনী মুহুর্মুহু গুলি চালিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যেই দখল করে নেয় হেফাজতে ইসলামের সমাবেশস্থল শাপলা চত্বর। এই বর্বরোচিত হামলার সংবাদ প্রচার অব্যাহত রাখায় দিগন্ত ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, হেফাজতের সমাবেশে যৌথবাহিনীর অপারেশনের পর শাপলা চত্বরের আশপাশে সাদা পাঞ্জাবি পরা বহু মানুষকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পড়ে থাকা লাশ সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে গুম করার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দমকল বাহিনীর সদস্যরা পানি দিয়ে রাস্তায় জমে থাকা রক্ত পরিষ্কার করার কথাও শোনা গিয়েছিল। ৭ ও ৮ মে ভোরে জুরাইন কবরস্থানে হেফাজত কর্মীদের বহু মৃতদেহ দাফন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যা সাভারের রানা প্লাজার অজ্ঞাত লাশ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মাদরাসার যেসব শিশু-কিশোর ও ওলামায়ে কেরামরা শাপলা চত্বরে হত্যার শিকার হন তাদের পরিবার র্যাব পুলিশের ভয়ে গোপনে নিহতদের লাশ দাফন-কাফন করতে বাধ্য হয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে যাদের পরিবারের সদস্যরা শাপলা চত্বরে হত্যার শিকার হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধেও অগণিত মামলা করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়েছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে ৫ দফা সুপারিশ জানানো হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে— হেফাজতের সমাবেশে নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে অতি দ্রুত একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা; শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডে নির্দেশদাতাসহ জড়িতদের নাম প্রকাশের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করা; বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে শাপলা চত্বরের নিহত ও আহত ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা; গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে শাপলা চত্বরে নিহত ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা এবং নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে 'ক্ষমতা হারানোর ভয়েই আওয়ামী সরকার শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে' শীর্ষক ছায়া সংসদে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা বিতার্কিকদের পরাজিত করে তানযীমুল উম্মাহ আলিম মাদরাসার বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন ও সাংবাদিক সাইদুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
এমএইচএন/এমজে