পারভেজ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছাত্রদল রাজনৈতিক অপপ্রচার করছে

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্রদল বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্মকেও কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় পারভেজ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্লাটফর্মটির নেতারা।
পারভেজ হত্যায় শোক প্রকাশ ও অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৯ এপ্রিল, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী হামলায় নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এ মর্মান্তিক ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। আমরা জাহিদুল ইসলাম পারভেজের পরিবার, সহপাঠী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি এবং একইসঙ্গে জোরালোভাবে দাবি জানাচ্ছি- এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্রদল বৈষম্যবিরোধীকে হামলার মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করছে উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। হত্যার প্রকৃত কারণ, প্রকৃত অপরাধী ও ক্যাম্পাসে সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে থাকা বাস্তব চিত্রকে আড়াল করে তারা ঘটনার রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদে মনোযোগী হয়েছে। এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে এই হত্যার মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে। আমরা এই রাজনৈতিক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ছাত্রদল বৈষম্যবিরোধীর বিরুদ্ধে ‘মিডিয়া ট্রায়ালে’ লিপ্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই হামলার প্রথম সিসি টিভি ফুটেজে যাদেরকে সরাসরি আক্রমণ করতে দেখা যায় তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই, ঘটনাস্থলে প্রদর্শিত দ্বিতীয় ফুটেজে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানা কমিটির সঙ্গে যুক্ত ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের ছাত্র হৃদয় মিয়াজি (২২১) ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সোবহান নিয়াজ তুষার (২৩১) ছিলেন। একইসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কর্মী তাওহিদ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ইমতিয়াজ জাহিদ এবং আরও কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীও। তবে তদন্তের আগে আমরা কোনোভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই না যে কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই ছাত্রদল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালিয়ে ‘মিডিয়া ট্রায়ালে’ লিপ্ত হয়েছে, যা নিন্দনীয় ও অনভিপ্রেত।
আমরা আবারও পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যে-ই হোক, তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যেহেতু ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থী হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপস্থিত সবাইকে তারা যে সংগঠনেরই হোক তদন্তের আওতায় আনা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।
ছাত্রদল গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্মকে কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল একটি পরিকল্পিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। তারা “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ন্যায্য দাবি ও গণঅভ্যুত্থানের প্লাটফর্মকে কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এই অপবাদ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগ্রামকে সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে যারা দমন করতে চায়, তারাই প্রকৃত অর্থে সহিংসতার পৃষ্ঠপোষক।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, একইসঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো নিরীহ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার না হয়। তদন্ত হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং প্রমাণ-ভিত্তিক যেখানে কোনোরকম রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাব খাটানো যাবে না।
আরও পড়ুন
ক্যাম্পাসগুলোর নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ ধরে আমরা একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই- গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়? কেন এমন ঘটনা বারবার ঘটছে এবং কারা শিক্ষাঙ্গনকে সহিংসতার আস্তানায় পরিণত করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর ইন্টেরিম সরকারকে দিতে হবে। আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার সংগ্রামে আগে যেমন ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
পরিশেষে, আমরা আবারও জাহিদুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তার হত্যাকারীদের বিচার এবং দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা সব গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
কেএইচ/এমএন