অনতিবিলম্বে সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলুন

দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে এখন জাতীয় সমঝোতা গড়ে তোলার এক অসাধারণ সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কারের প্রশ্নে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হলে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ সহজতর হবে। এই ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনদের দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির দুই দিনব্যাপী সাংগঠনিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।
সাইফুল হক বলেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারের দৃশ্যমান কিছু সাফল্যের পরেও মানুষের প্রত্যাশা ইতোমধ্যে ফিকে হতে শুরু করেছে। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশার পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ক্রমে এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তৃতি ঘটছে। খুন রাহাজানি, সংঘাত, সহিংসতা থামছে না। জবরদস্তি, জবরদখল, মাস্তানি, চাঁদাবাজি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সামাজিক নিরাপত্তা এখনও বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকা নানা দিক থেকে হুমকির মুখে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে গঠিত শ্বেতপত্র কমিশন ছয় মাস আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে লুটপাট ও দুর্নীতির রোমহষর্ক রিপোর্ট জমা দিলেও এ ব্যাপার সরকারের দিক থেকে কোনো উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি।
রক্তে ভেজা গণঅভ্যুত্থান মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিদায় নিয়েছে উল্লেখ করে সাইফুল হক বলেন, কিন্তু গোটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রয়েছে। কেবল তাই নয়, ভিন্ন ভিন্ন চেহারায়, ভিন্ন ভিন্ন আদলে রাষ্ট্র ও সমাজের নানা স্তরে নতুন ফ্যাসিবাদী ধ্যান ধারণা আবার জায়গা করে নিচ্ছে। গণজাগরণ, গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব মানুষ মুক্ত করে, তাদের অধিকার ও মুক্তির পথ প্রশস্ত করে। কিন্তু এবার গণঅভ্যুত্থানের বিশাল অর্জনের পরেও তার স্ববিরোধিতা। গণঅভ্যুত্থানের মতাদর্শ, রাজনীতি, সংস্কৃতি বা সামাজিক মনস্তত্ত্বের দিক থেকে এক ধরনের দক্ষিণ পন্থার উত্থানের জমিন তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে কিছু বিপ্লবী সম্ভাবনার স্ফুরণ দেখা গেছে সত্য, কিন্তু এটা কোনো বিপ্লব বা বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান ছিল না। সে লক্ষ্যে দৃশ্যমান কোনো মতাদর্শিক, রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক প্রস্তুতিও ছিল না। ছিল কোটি কোটি মানুষের বঞ্চনা আর নিপীড়নজনিত সীমাহীন ক্ষোভ ও অসাধারণ স্বতঃস্ফূর্ততা। আওয়ামী দুঃশাসনের পতনের পর নতুন কোনো শ্রেণি বা তাদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় বসেনি।
সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে আট মাস পার হলেও এখনও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত থাকলে এই বছরের মধ্যেই, এমনকি ডিসেম্বরের আগেও দেশের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সনজিদা খাতুন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাপোলো জামালী, গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় নিহত ৬০ হাজার নারী পুরুষ, শিশু, সম্প্রতি কাশ্মীরে নিহত পর্যটকসহ বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের কারণে নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এবং তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
আরও পড়ুন
পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদকের রাজনৈতিক রিপোর্টের ওপর আলোচনা করেন, শহীদুল আলম নান্নু, মাহবুবুল করিম টিপু, খলিলুর রহমান খলিল, আসাদুল ইসলাম আজাদ, আবদুর রউফ, নির্মল বড়ুয়া মিলন, আউয়াল মাহমুদ, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহজাহান সিকদার, শমর আলী, মুনসুর রহমান, ডা. মৃদুল বড়ুয়া, আবদুল হাকিম, শিউলি বেগম, জামাল সিকদার, ইউসুফ হাসান, তিতাস সরকার, পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মাহমুদ হোসেন প্রমুখ।
এএইচআর/এমএন