দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে ড. ইউনূসকে পদত্যাগ করতে দেব না : রাশেদ খান

দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে কোনোভাবেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসের প্রতি তাদের আস্থা অটুট রয়েছে, তবে তার নেতৃত্বাধীন টিম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার টিম ভালো খেলছে না। ভালো টিম না পেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া যায়, কিন্তু ম্যাচ জেতা যায় না।
শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে এনসিপির প্রতিনিধি, দুর্নীতিগ্রস্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও অনৈক্য-নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের নেতা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
রাশেদ খান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যা বিচার করতে হলে অবশ্যই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের টিম পুনর্গঠন করতে হবে। অন্যথায় এই টিম নিয়ে খেলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভালো করলেও টিম দিয়ে ম্যাচ জেতা যাবে না। আর এ কারণেই আমাদের দাবি উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন।
তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করছেন না। মূলত এনসিপির উপদেষ্টা ও নেতাদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাদের বলেছেন, তোমরা সংযত হও, নইলে আমি দায়িত্বে থাকব না। এটা মূলত তাদের জন্য সতর্কবার্তা। কিন্তু তারা বাইরে ছড়িয়ে দেয়, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন। সেই তারাই আবার মধ্যরাতে বলতে থাকেন, প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন। মূলত এনসিপির উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে এই নাটক তারা মঞ্চায়ন করেছে।
আরও পড়ুন

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ একজন উপদেষ্টা বলেছে, শুধু নির্বাচনের জন্য আমরা বসি নাই। কিন্তু ১০ মাসেও তো গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের নমুনা দেখছি না। বরং সংস্কারের নামে নসরুল হামিদ বিপুর লুটপাটের সম্পদের পাহারাদার হয়েছেন একজন উপদেষ্টার স্বামী। সাবের-মান্নানদের জামিন করিয়েছেন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছেন। সংস্কারের নামে নৈরাজ্য ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছে উপদেষ্টা মাহফুজ, দুর্নীতিতে জড়িয়েছে উপদেষ্টা আসিফ।
প্রশ্ন রেখে রাশেদ খান বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা কি করে প্রশাসক হলো, আসিফকে তার জবাব দিতে হবে। আমাদের স্পষ্ট দাবি শপথ লঙ্ঘনের দায়ে এনসিপির উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে পদত্যাগ করতে হবে। এবং প্রশাসক এজাজকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তা দূর হবে না।
তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। তার আগে গণহত্যার বিচার ও ঐকমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। যদিও জানতে পারছি, কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতার লোভে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছেন।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, বিতর্কিত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম শপথ ভঙ্গ করেছেন, সুতরাং তাদের পদত্যাগ করতেই হবে। তারা ইতোমধ্যে তাদের রাজনৈতিক অকৌশলের মাধ্যমে ড. ইউনূসকেও বিতর্কিত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। আমরা ড. ইউনূসের পক্ষে আছি।
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন বলেন, জুলাইকে সমুন্নত রাখতে, জাতীয় ঐক্য ঠিক রাখতে, যারা জুলাইকে পুঁজি করে মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছে, যাদের পিএস দুর্নীতি সঙ্গে জড়িত সে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, অনৈক্য সৃষ্টিকারী মাহফুজ আলমকে পদত্যাগ করতে হবে। তারা পদত্যাগ না করলে তাদের বহিষ্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে, তাছাড়া জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িত ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে বহিষ্কারের করতে হবে। অন্যথায় ঢাকা মহানগর সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে।
যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মিজানুর রহমান, দক্ষিণ গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি রাহুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হোসাইন নুর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর হিরণ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান শুভ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
টিআই/এসএসএইচ